অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
বাংলা নববর্ষ সম্বন্ধে ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ - সোনা কান্তি বড়ুয়া

 প্রকৃতির অপরুপ রুপ নিয়ে ইংরেজি ক্যালেন্ডারের নববর্ষ ২0২0 শুরু হয়েছে। যীশু খৃষ্ঠের নামে খৃষ্ঠাব্দ আছে এবং গৌতমবুদ্ধের নামে বুদ্ধাব্দ আছে! ঐতিহাসিকদের দৃষ্ঠিতে গৌতমবুদ্ধ বিশ্বশান্তির উৎস! বিশ্বশান্তির জনক গৌতমবুদ্ধের ধর্মচক্র ( অশোক চক্র) ভারতের জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় এমব্লেম বা সরকারী স্মারক চিহ্ন রুপে বিরাজমান! বাংলা বিশ্বকোষে (১৩শ ভাগ, পৃষ্ঠা ৬৫) রাজপুত্র সিদ্ধার্থের (গৌতমবুদ্ধ) বঙ্গলিপি ( 64 লিপি ) অধ্যয়ন করার ঐতিহাসিক প্রমাণ বিরাজমান এবং ২৬০০ বছর পূর্বে গৌতমবুদ্ধ বঙ্গলিপিকে ( Hindi, Assamese, Tamil, etc, 64 several লিপি)  ব্রাহ্মণদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন (দেশ 01 February 1992, Kolkata)। বাংলা বর্ণমালার ইতিহাস বিজয়ী পাঠক হয়ে ও গৌতমবুদ্ধের নামে বাংলাদেশের পঞ্জিকায় (ক্যালেন্ডারে) বুদ্ধাব্দ লেখা হলো না কেন? 

বাংলা ক্যালেন্ডারের ২৫৬৩ বঙ্গাব্দ (গৌতমবুদ্ধ  & বুদ্ধাব্দ) বাংলা  ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদে ছিল। আজও হিন্দুরাজনীতি পূজনীয় বুদ্ধাব্দ (2563) কে বাদ দিয়ে প্রতিদিন সকালে আকাশবানীতে সংস্কৃত ভাষায় সংবাদ পরিবেশনের সময় শকাব্দ (1441) ঘোষনা করা হয়! মুসলমানদের বাবরি মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির বানানোর মত হিন্দুরাজনীতি ইসলামিক হিজরি (1441) সালকে ভেঙে চন্দ্র বা ইংরেজিতে সূর্য ক্যালেন্ডারের নামে হিন্দুমার্কা বঙ্গাব্দ(1426) রচনা করেছেন। এখন ১৪ ২৬ বঙ্গাব্দতে কীভাবে এলো?  রাজনীতির মাফিয়া চক্রে ধর্মের মস্তক বিক্রয় এবং হিন্দুরাজনীতি ভারতবর্ষে বৌদ্ধ ইতিহাস ধ্বংস করতে বঙ্গাব্দের মিথ্যা ইতিহাস রচনায় ষড়যন্ত্র করেছিল। আজ ও প্রত্মতাত্বিক, ভূতাত্বিক, পুরাতত্ত্ব, নৃতত্ব ও ভাষাতত্বের আলোকে বাংলাভাষা পালিভাষার বিবর্তিত রূপ এবং পালরাজত্বকালে বৌদ্ধদের  অবদানে চর্যাপদের বঙ্গাব্দ ছিল ২৫৬৩  বঙ্গাব্দ  (১৪২৬  নয়)।

ধর্মের নামে যে পশু আমাদের অন্তরে প্রবেশ করেছে সেই পশুকে মানবতার অস্ত্র দিয়ে ধ্বংস করে মানবতার দেশ গড়ে তুলতে হবে। জয় সত্য ও  মানবতার জয়। আল্লাহ ও ভগবানকে পূজা করার অর্থ কি?  প্রীতি ও প্রেমের পুন্য বাঁধনে মনুষ্যত্ব! সম্প্রতি বাংলা নববর্ষ সম্বন্ধে অনেকেই মাঝে মধ্যেই প্রশ্ন করে যে, জয় বাংলার ইতিহাসে পৃথিবীর সর্বপ্রথম বাংলা সাহিত্য গ্রন্থ চর্যাপদে বৌদ্ধদের ২৫৬৩ বাংলা (বুদ্ধাব্দ) সাল  ছিল! বুদ্ধমূর্তি, সম্রাট অশোক, পাল রাজত্বকাল এবং বাংলা ভাষার আদিমতম নিদর্শন চর্যাপদের না বলা ইতিহাসের অভিব্যক্তি “হে ইতিহাস কথা কও।”  হিন্দুরাজনীতির ব্রাহ্মণ্যবাদ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদের ২৫৬৩ বাংলা সাল (বুদ্ধাব্দ) কে বাদ দিয়ে সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে ইসলামিক বঙ্গাব্দের  জন্মদাতা হিজরি সালকে(১৪৪১) বিকৃত করে ১৪২৬   বঙ্গাব্দ বানিয়েছিল! সম্প্রতি বাংলা নববর্ষ সম্বন্ধে বিবিধ প্রবন্ধ  পড়ে আমরা জানতে পারলাম যে ১৫৫৬ খৃষ্ঠাব্দ থেকে মোগল সম্রাট আকবর কর্তৃক বাংলাদেশে বাংলা সন প্রচলিত হয়। প্রসঙ্গত: প্রতিবছর নববর্ষ উপলক্ষে ১৪ বা ১৫ই এপ্রিল জুড়ে থাইল্যান্ড, লাওস, বার্মা, ভারত, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, সিংগাপুর ও ইন্দোনেশিয়ায় “পানি খেলা সহ বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ইংরেজিতে প্রথমে ঢাকা (Dacca) বানান ভুল ছিল এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর তা শুদ্ধ (Dhaka) করা হয়েছিল।  

ভারতে  হিন্দুধর্মের পূর্বে কাশ্যপবু্দ্ধর বৌদ্ধধর্ম unknown ছিল! বৈদিক পূর্ব রাজর্ষি মহেঞ্জোদারো (Maha Sudassana) বোধিসত্ত্বের প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন মহেঞ্জোদারো মিউজিয়ামে  বিরাজমান (Karachi, Sind, Pakistan)। বৌদ্ধধর্ম গ্রহন না করে বা বৌদ্ধ ধর্মালম্বী না হয়ে হিন্দুরাজনীতি পূজনীয় গৌতমবুদ্ধকে নবম অবতার বানিয়ে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের বৌদ্ধ তিরুপতি মহাবিহার দখল করে হিন্দু মন্দিরে রুপান্তরিত করেছে এবং বুদ্ধ মূর্তিকে হিন্দুর ভগবান বেঙ্কটশ্বর বানিয়েছে। আনন্দবাজার পত্রিকার (সম্পাদকীয়, ২২ আগষ্ট, ১৯৯৩) মতে, “রামায়নের আদি হিসাবে তাঁহাদের কেহ কেহ প্রাচীনতর ভারতীয় কাহিনীর যথা: “দশরথ জাতক” (জাতক নম্বর: ৪৬১) এর দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়াছেন। ... সেই উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা কেমন করিয়া ভুলিয়া গেলেন যে, একদা রাশি রাশি বৌদ্ধ ধর্মস্থান ধ্বংস করিয়া একদিন গড়িয়া উঠিয়াছিল রাশি রাশি হিন্দু মন্দির। তাঁহারা কি জানেন, হিন্দুর কাছে অতি পবিত্র পুরীর মন্দিরের প্রাক্ ইতিহাস সম্পর্কে কানিংহাম কিংবা রাজেন্দ্রলাল মিত্রের কী অভিমত? তাই বলিতেছিলাম, অযোধ্যা একটি বৃহৎ প্রশ্ন বটে, কিন্তু নিতান্তই মনগড়া এক নির্বোধ প্রশ্ন।” সর্বপ্রথমে হিন্দু রাজনীতির দাদারা বৌদ্ধ ধর্মকে কবর দেবার পর (দেশ , ৪ মে ২০০১ কলিকাতা পৃষ্ঠা ১২), যেমন কথিত আছে, “ কর্ণসুবর্ণের শৈব রাজা শশাংক সেতুবন্ধ থেকে হিমগিরি পর্যন্ত বালকবৃদ্ধ নির্বিশেষে সমস্ত বৌদ্ধকে  হত্যা করার আদেশ দিয়েছিলেন। “ বাংলাদেশ ও ভারতে হিন্দু মন্দিরে বুদ্ধ পূজা করার প্রথা নেই। 

নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন ঢাকার বাংলা একাডেমির একুশের বইমেলার (২১ ফেব্র“য়ারী ২০১১) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সন্মানিত অতিথি হিসেবে তাঁর ভাষনে চর্যাপদের ৪৯ নম্বর কবিতার মিথ্যা ব্যাখ্যা করে বাঙালি বৌদ্ধ কবি ভুসুকুপাদকে অপমানিত করেন এবং বুদ্ধাব্দকে বাদ দিয়ে ইসলামিক হিজরি (1437) সালকে হিন্দুত্বকরনে বঙ্গাব্দের (1423) মিথ্যা ইতিহাস বর্ণনা করেন। ‘সাপ্তাহিক আজকালে পৃষ্ঠা ১৩, ফেব্র“য়ারী ৪,  ২০১১ (সাল, টরন্টো)’ নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন, বাংলা একাডেমীর অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সন্মানিত অতিথি হিসেবে “ভাষা চেতনা বাঙালির গর্বের বিষয়” শীর্ষক ভাষণে বলেন, “অনেকেই মাঝে মধ্যেই প্রশ্ন করে যে ১৪০০ সাল হলো কীভাবে। এখন ১৪১৭ তে কী ভাবে এলো, ১৪১৭ হচ্ছে মক্কা থেকে মদীনায় মোহাম্মদের (সা.) যাওয়ার দিন থেকে গণনার স্মারক। প্রথম দিকে লুনার এবং তারপরে সোলার ক্যালেন্ডার এই দুটি মিলিয়ে করা।“  

সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে হিন্দুরাজনীতি ‘ইসলামী সাল (1441) হিজরিকে’ চন্দ্র এবং সূর্য্য ক্যালেন্ডারের দোহাই দিয়ে রচনা, ঐতিহাসিক প্রমাণ বিরাজমান! সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে “আল্লাহ উপনিষদে” রচিত হলো: “আল্লো জ্যেষ্ঠং শ্রেষ্ঠং পরমং, পূর্ণং ব্রহ্মানং অল্লাম। অর্থাৎ দেবতাদের রাজা আল্লাহ আদি সকলের বড় ইন্দ্রের গুরু।” তবে বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে সোনার বাংলার অন্যতম শাসক মহাবীর ঈশা খাঁ সম্রাট আকবরের সেনাপতি মানসিংহের সাথে মুখোমুখি যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন।    

হিন্দুরাজনীতি বৌদ্ধ ধর্মচক্রকে বদলায়ে অশোকচক্র বানিয়েছে এবং সম্রাট অশোকের বৌদ্ধ ভারতকে হিন্দু ভারত করেছেন। বর্তমান ভারত সরকার এবং ব্রাহ্মণ্যবাদের জঘন্য চাতুরীর ইতিহাস লিখতে গেলে একটি মহাভারত লিখতে হয়। বাঙালির আত্মপরিচয়ের খোঁজে ১৯২৮ সালে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টর মোহাম্মদ শহীদুলাহ (ইংরেজীতে তাঁর পি.এইচ. ডি.  থিসিসি ছিল) ‘বুড্ডিষ্ট মিষ্টিক সংস (বা বৌদ্ধ চর্যাপদ)’ শীর্ষক বই লিখেছেন এবং বলেছেন, “আমরা বলিতে পারি যে বৌদ্ধগানই (চর্যাপদ) যেমন একদিকে গজলের, তেমনি অন্যদিকে বৈষ্ণব পদাবলীর মূল উৎস। বৌদ্ধগানের শূণ্যতা বৈষ্ণব পদাবলিতে রাধা হয়েছে!” 

অবশেষে হিন্দু রাজনীতির আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সন্মিলিত বৌদ্ধবিশ্বের প্রতিবাদ মুখরিত বুদ্ধগয়ায় মহাবোধি মন্দিরে বুদ্ধ বন্দনার পর মহাভিক্ষু সমাগমে প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু হয়। নয়জনের বুদ্ধগয়া ম্যানেজম্যান্ট কমিটিতে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট সহ আর ও চারজন হিন্দু সদস্য কেন? ভারতে জৈন, মুসলমান, শিখ এবং খৃষ্ঠান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কোন হিন্দু সদস্য নেই। বৌদ্ধদের তিরুপতি বালাজী মন্দির এবং পুরীর জগন্নাথ মন্দির হিন্দু রাজনৈতিকগণ দখল করার পর রাজনীতির মাফিয়া চক্রে ধর্মের মস্তক বিক্রয়।     

প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে বৌদ্ধ চিন্তাধারাপুষ্ঠ অশোক চক্র (ধর্মচক্র) ভারতের জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় এমব্লেম বা সরকারী স্মারক চিহ্ন রুপে বিরাজমান! সেন বর্মন রাষ্ট্রের প্রবল আধিপত্যের  প্রেক্ষাপটে চর্যাপদের জন্ম আধুনিক গণতান্ত্রিক অধিকারের মেনিফিষ্টো হিসেবে। এর মধ্যে নিহিত রয়েছে বাঙালীর সর্বপ্রথম গনতন্ত্রের বীজ ‘বাক স্বাধীনতার অধিকার’। বাংলা ভাষার প্রথম ‘বিপ্লবী মিনার’। ১৯০৭ খৃষ্টাব্দে নেপালের রাজদরবারের পুঁথিশালায় প্রাচীন পান্ডুলিপির সন্ধান (১৯০৭ - ২০০৭) করতে গিয়ে মহামহোপধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহোদয় উক্ত বৌদ্ধ চর্যাপদের মরমী সংগীতগুলো আবিস্কার করেন এবং ভাষা আন্দোলনের আলোকে চর্যাপদ সন্ধানের ( ১৯০৭- ২০০৭) শতবার্ষিকী! দুই হাজার পাঁচশো  তেষট্টি বছরের বৌদ্ধ ইতিহাসে;  ক্যালেন্ডারে বাংলা ভাষা, বাংলা বর্ণমালা এবং বঙ্গাব্দ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নিপীড়িত মানবাত্মার জয়গানে মুখরিত বাংলা  ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদে এই চর্যাগুলো। বাঙালী সমাজের এই করুণ ছবি দেখতে পাই ৩৩ নং চর্যায়। ”টালত মোর ঘর নাঁহি পড়বেসী। হাড়ীতে ভাত নাঁহি নিতি আবেশী। এর মানে, নিজ টিলার উপর আমার ঘর। প্রতিবেশী নেই। হাঁড়িতে ভাত নাই, অথচ নিত্য ক্ষুধিত।“

অমর্ত্য সেন তাঁর উক্ত ভাষনের সর্বপ্রথমে বলেন, “যেমন একাদশ শতাব্দীতে চর্যাপদ। এটি বৌদ্ধ ধর্মীয় লেখা। এর মধ্যে ভুসুকু বলে একজন কবি ছিলেন। তিনি পদ্মা দিয়ে যাচ্ছিলেন নৌকাতে। পথে তার যাবতীয় সম্পত্তি ডাকাতরা নিয়ে যায়, তাকে মারধর করে। তারপর তিনি লিখছেন, নিজেকে নিয়েই যে, ভুসুকু তোমার সব সম্পত্তি ডাকাত নিয়ে গেছে। আমি (অর্মত্য সেন) সে যুগের বাংলা থেকে এ যুগের বাংলা করছি। তিনি (ভুসুকু)বলছেন তোমার সব সম্পত্তি নিয়ে গিয়ে তোমাকে ডাকাতরা মুক্তি দিয়েছে। তুমি এখানেই থেকে জাত বিচার বাদ দিয়ে একটি চন্ডাল মেয়ে বিয়ে করে পরিবার প্রতিষ্ঠা করো। তুমি সব হারিয়ে সত্যি বাঙালি হলে।”

তদানিন্তন ব্রাহ্মণ শাসিত সমাজে মহাকবি ভুসুকু অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস নিয়ে বলেছিলেন, “আমি আজ বাঙালি হয়ে ‘অহং’ কে জয় করে সিদ্ধপুরুষ হয়েছি।” বৌদ্ধ পালি ভাষায় যার নাম ‘সউপাধিশেষ নির্বান লাভ’ বা রক্ত মাংসের শরীর নিয়ে পরমার্থ জীবন যাপন। ধর্ম বা ব্রাহ্মণ নিয়ন্ত্রিত সমাজে মানবাধিকার রক্ষা ও প্রচার করার মানসে বৌদ্ধধর্মের প্রয়োজন আজ ও বিরাজমান। চর্যাপদ এবং বঙ্গাব্দ প্রসঙ্গ নিয়ে সন্মানিত অতিথি অমর্ত্য সেন ঢাকায় একুশের বইমেলা অনুষ্ঠানে আলোচনা করেছেন। আমরা মনযোগ দিয়ে তাঁর লেখা পড়েছি। উক্ত বিষয়ে তথ্য জানা ও পাওয়া বাংলা ভাষাভাষী জনতার মৌলিক অধিকার আছে বলে আমরা মনে করি। দুর্ভাগ্যবশত: চর্যাপদের ৪৯ নম্বর কবিতায় জিতেন্দ্রীয় সিদ্ধপুরুষ কবি ভুসুকু সম্বন্ধে অমর্ত্য সেনের আলোচ্যমান গল্পের সাথে আকাশ পাতাল তফাৎ পরিলক্ষিত হয়। চন্ডাল মেয়ে বিয়ে করে বা সব হারিয়ে নয়, ভুসুকু ষড়রিপু সব জয় করে মহাজ্ঞানী ও মহামানব হয়েছিলেন।

সন্মানিত প্রবক্তা অমর্ত্য সেনের ভাষনে কোথায় ভুল ছিল তা আমরা জানতে পারি চর্যাপদের উক্ত ৪৯ নম্বর কবিতায় এবং পরম শ্রদ্ধেয় কবি ভুসুকু লিখেছিলেন, “বজ্রনৌকা পাড়ি দিয়ে পদ্মানদীতে গেলাম। নির্দয় দস্যু দেশ লুট করে নিয়ে গেল। নিজের গৃহিনীকে (কামতৃষ্ণাকে) চন্ডালে নিয়ে যাবার পর ভুসুকু আজ তুমি বাঙালি হলে। পঞ্চপাটন (৫ উপাদান স্কন্ধ) দগ্ধ, ইন্দ্রিয়ের বিষয় বিনষ্ঠ। জানি না আমার চিত্ত কোথায় গিয়া প্রবেশ করলো। আমার সোনা রুপা কিছুই থাকলো না, নিজের পরিবারে মহাসুখে থাকলুম। আমার চৌকোটি ভান্ডার নিঃশেষ হলো, জীবনে মরণে আর ভেদ নেই।”



আলোচ্যমান চর্যায় কবি ভুসুকু কামতৃষ্ণা বা বিয়ে করার ইচ্ছাকে গৃহিনী বলেছেন, “আজি ভুসুকু বঙ্গালী ভইলী (আজ বাঙালির ইতিহাসে ভুসুকু কামতৃষ্ণাকে জয় করে সিদ্ধপুরুষ বা বাঙালি হল), নিঅ (নিজ) ঘরিনী (কাম তৃষ্ণার লোভ লালশা বা গৃহিনী) চন্ডাল লেলী (চন্ডালে নিয়ে গেল)।” কবি ভূসুকুই সর্বপ্রথম “ বাঙালি ” শব্দের আবিষ্কারক এবং পাল সম্রাটগণের ৮ম শতাব্দী থেকে ১১ শতাব্দী ৪০০ বছর পর্যন্ত চর্যাপদে বুদ্ধাব্দকে (২৫৫৫ বুদ্ধাব্দ) বঙ্গাব্দ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল।  

ডাক্তার কে যমানাদাসের লেখা ‘তিরুপতি বালাজি ওয়াজ এ বুদ্ধিষ্ঠ স্রাইন’ শীর্ষক মহাগ্রন্থে লেখা আছে, “আসলে এটি একটি প্রাচীন বুদ্ধমূর্তি। মনুষ্যত্বের  অপমান করার পরে হিন্দুরাজনীতি বৌদ্ধধর্ম গ্রহন না করে বা বৌদ্ধ ধর্মালম্বী না হয়ে পূজনীয় গৌতমবুদ্ধকে হিন্দুরাজনীতি নবম অবতার বানিয়ে ভারতের  অন্ধ্রপ্রদেশের বৌদ্ধ তিরুপতি মহাবিহার দখল করে হিন্দু মন্দিরে রুপান্তরিত করেছে এবং  বুদ্ধ মূর্তিকে হিন্দুর ভগবান বেঙ্কটশ্বর বানিয়েছে।  ডাক্তার কে যমানাদাসের লেখা ‘তিরুপতি বালাজি ওয়াজ এ বুদ্ধিষ্ঠ স্রাইন’ শীর্ষক মহাগ্রন্থে লেখা আছে, “আসলে এটি একটি প্রাচীন বুদ্ধমূর্তি।  

হিন্দুধর্মীয় সমাজপাঠে রাজনীতির কারনে জাতিভেদ প্রথার অভিশাপের বিরুদ্ধে গৌতমবুদ্ধের ‘পঞ্চশীল’ মানবতাবাদ (সহ পরে বৌদ্ধদের চর্যাপদ রচনা) এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ”চন্ডালিকা” শীর্ষক নৃত্যনাট্যে বিশ্বমানবতার বানী অহিংসা পরম সুধা প্রচার করেছেন।  ভারতে হিন্দুধর্মের পূর্বে কাশ্যপবু্দ্ধর   বৌদ্ধধর্ম প্রসঙ্গ! অষ্ঠবিংশতি বুদ্ধ বন্দনার আলোকে দশরথ জাতকই  হিন্দু  রামায়নের উৎস! প্রায় ৫ হাজার পূর্বে প্রাচীন ভারতে আর্য্যগণ এবং বৈদিক রাজা ঈন্দ্র মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পার (সিন্ধুসভ্যাতা) কাশ্যপবু্দ্ধর প্রচারিত বৌদ্ধধর্ম ধ্বংস করে বৈদিক সভ্যতা এবং ধর্ম প্রতিষ্ঠা  করেছিলেন। অষ্ঠবিংশতি বুদ্ধ বন্দনার  আলোকে ভারতে হিন্দুধর্মের পূর্বে কাশ্যপবু্দ্ধর বৌদ্ধধর্ম এবং ঋগে¦দের Rigveda (প্রথম বেদ) Sources (১/১০৫/৮ ও ১০/৩৩/২) মতে (দেশ, Page 14, কোলকাতা, 01 November 1999 Mr. Somanath Roy and Page 117, Mr. Nri Singh Prasad Bhaduri) বৈদিক ধর্ম পন্থী আর্য্যদের রাজা ইন্দ্র মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পার প্রাগৈতিহাসিক বৌদ্ধধর্ম ধ্বংস করেছিলেন! ফলে মানুষ নিহত হয়েছিলেন অগণ্য। ব্রাহ্মণ্যবাদের সনাতন ধর্মের মাফিয়াচক্রে জাতিভেদ প্রথায় হিন্দু রাজনীতির ঐতিহাসিক ষড়যন্ত্রে ভয়ঙ্কর মিথ্যা দিয়ে ভারতের ইতিহাস রচিত হ’লো ! 

নেপালে কাশ্যপবুদ্ধের বৌদ্ধনাথ্ শীর্ষক বিরাটকায় বৌদ্ধ স্তুপ কাঠমান্ড়ু নগরে বিরাজমান 1 ভারতে হিন্দুধর্মের পূর্বে মহেঞ্জোদারো মিউজিয়ামে রাজর্ষি বোধিসত্ত্বের প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন বিদ্যমান। মহেঞ্জোদারো মিউজিয়ামে (Pakistan) বৈদিক পূর্ব কাশ্যপবুদ্ধের বৌদ্ধধর্মের বোধিসত্ত্ব (খৃষ্ঠপূর্ব পাঁচ হাজার বছর আগে) বিরাজমান এবং অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস নিয়ে  হিন্দু রাজনীতির মিথ্যা ইতিহাস সম্বন্ধে আলোচনা করা নিতান্ত প্রয়োজন। পল্লব সেনগুপ্তের লেখা “ধর্ম ও ভারতবর্ষ, আদিপর্বের রূপরেখা”, এবং দেশ, Page 14, কোলকাতা, 01 November 1999. হিন্দু রাজনীতির ঐতিহাসিক ষড়যন্ত্রে হিন্দু রাজনীতির হাতে প্রাচীনতম রাজর্ষি মহেঞ্জোদারো বোধিসত্ত্বের প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন মহেঞ্জোদারো মিউজিয়ামে বিরাজমান এবং ধর্মচক্র প্রবর্তন সূত্রে গৌতমবুদ্ধ ঘোষনা করলেন, “বুদ্ধের ধর্ম বুদ্ধ ব্যতীত অন্য কেহ (সমণ ব্রাহ্মণ বা দেব) প্রচার  করতে সমর্থ নহেন (সমণেন বা ব্রাহ্মেণন বা দেবেন বা ব্রাহ্মূণা কেনচি বা লোকস্মিন্তি)।”     

 প্রাচীন বাংলাদেশে মহাস্থানের পুন্ড্রবর্দ্ধনে (বগুড়া) এবং পাহারপুরে (রাজশাহীর সোমপুরী বিহার) বসে গৌতমবুদ্ধ  দিনের পর দিন বাঙালি সমাজকে দান, শীল, ভাবনা এবং সুন্দর ভাবে জীবন যাপনের শিক্ষা দিয়েছেন।  লোভ দ্বেষ মোহ সহ  ষড়  রিপুকে জয় করার নাম বৌদ্ধ‘ধর্ম এবং  হিন্দু মুসলমান খৃষ্ঠান সর্ব মানবের ধর্ম (Jew,  Jain and Sikh etc.)!  হিংসা ও লোভের নাম ধর্ম নয়!   হিন্দুরাজনীতি বুদ্ধের  দেহকে দেখে কিন্তু বুদ্ধের উপদেশ মেনে চলে না এবং বুদ্ধের উপদেশ ছিল, “যে আমার দেহকে দেখে সে আমাকে দেখে না, যে আমার উপদেশ মেনে চলে সে আমাকে দেখে ও মেনে চলে।“  

হিন্দু মুসলমানের স্রষ্টা এক ও অভিন্ন। যিনি রাম তিনিই রহিম। “প্রত্যেকেরই জীবনধারণের স্বাধীনতা ও ব্যক্তি নিরাপত্তার অধিকার” ধর্মে বিরাজমান।  হিন্দুরাজনীতির প্রাচীন বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের জন্যে ভারত,পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের বৌদ্ধগণ by force মুসলমান হয়েছিলেন (দেশ, ৪ মে ২০০১ কলিকাতা পৃষ্ঠা ১২)! ভারতে অমানবিক দলিত বিদ্বেষ কেন? ধর্ম নামক ক্যানসার বা মহামারি রোগে মুসলমান সমাজে বিশ্ব  রাজনীতির মগজ ধোলাই! আরবের ধর্ম বঙ্গজয় করলে ও গৌতমবুদ্ধ  বাংলাদেশের এবং হযরত শাহজালালের (র) পূর্বে বিক্রমপূরের (মুন্সিগঞ্জ) বজ্রযোগিনী গ্রামের বাঙালি মহাজ্ঞানী অতীশ দীপংকর শ্রীজ্ঞান তিব্বত ও চীনে বাঙালির বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেন।

 আজ 1426  বঙ্গাব্দ রচনায় বঙ্গাব্দের মিথ্যা ইতিহাস রচনা করে বাংলা ক্যালেন্ডারের মস্তক বিক্রয় করে চলেছে এবং বাংলা ভাষা বৌদ্ধধর্মের থেরবাদী পালি ভাষার বিবর্তিত রুপ! গৌতমবুদ্ধ বাংলা ভাষার জনক। সম্রাট অশোকের রচিত শিলালিপির (নেপাল) মতে, গৌতমবুদ্ধের পূর্বে কাশ্যপবুদ্ধ এবং কনকমুনিবুদ্ধ সহ আর ও বুদ্ধ ছিলেন। তাই গৌতমবুদ্ধ বৈদিকধর্মের উত্তরাধিকারী নন। গৌতমবুদ্ধের পূর্বে দেবভাষা বা সংস্কৃত ভাষার কোন গ্রন্থ ছিল না। বাংলাভাষা সংস্কৃত ভাষা থেকে জন্ম নেয়নি, অশোকের শিলালিপির ভাষা ব্রাহ্মলিপি (প্রায় ৪০ টা ভাষায় বর্ণমালার জনক), অনুসরণ করে দেবনাগরী লিপি বা বর্ণমালা প্রতিষ্ঠিত হয়! বিশ্বশান্তির উৎস নিরুপণ করতে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মহাশয় জাতিসংঘের ভাষণে ঘোষণা করলেন, “ভারত বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পূজনীয় বুদ্ধ দিয়েছে এবং পূজনীয় গৌতমবুদ্ধই(বুদ্ধের উপদেশ) বিশ্বশান্তির উৎস! যুদ্ধ নয় বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে চলমান জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সম্মেলনে শুক্রবার নিজের ভাষণে তিনি এ কথা বলেন (27 September 2019 খবর এএনআই'র}।“     

সোনা কান্তি বড়ুয়া । টরন্টো, কানাডা