নির্বাচন কমিশন সরকারকে ডুবাবে - নয়ন চক্রবর্ত্তী
রাজনীতি- নির্বাচন নিয়ে কারো মাথাব্যথা না থাকতে পারে। কিন্ত এটা তো স্বীকার করা যায় না এসবের সাথে কারো সর্ম্পক নেই। বাংলাদেশে সনাতন ধর্মালম্বীরা আছে এটা বাংলাদেশ সরকারের নির্বাচন কমিশন নামক বস্তুটি ভুলে গেছে।
বাংলাদেশের সচেতন নাগরিকদের মতো আমি অধমও মনে করেছিলাম হয়তো ভুলে নির্বাচন কমিশন ঢাকা সিটির নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছে। কিন্তু তা ভুল প্রমাণিত হলো ইসি সচিবের বক্তব্য শুনে।
নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. আলমগীর বলেছেন, ‘নির্বাচন ও পূজা দুটোই ‘পবিত্র’ কাজ হওয়ায় একসঙ্গে অনুষ্ঠানে কোনো সমস্যা হবে না।’
সরস্বতী পূজার কারণে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের একটি আবেদন হাই কোর্ট মঙ্গলবার খারিজ করার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় একথা বলেন তিনি।
“নির্বাচন ও পূজা একসঙ্গে হবে, এটি সাংঘর্ষিক হবে না। আদালতের আদেশ সবাইকে মানতে হবে। রংপুরের ভোটও পূজার সময়ে হয়েছে। এবারও তা হতে কোনো অসুবিধা নেই। পূজা উৎসবের আমেজে হবে; একই সঙ্গে ভোটও হবে।”
উপরের বক্তব্য শুনে কি বলতে ইচ্ছে করে? এসব আমলারাই দেশ চালায়। এদের পজিশনে যেতে এদেশের শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা দৌড়াচ্ছে। এই যদি হয় পজিশনের বক্তব্য তাহলে আমাদের দৌড় হবে টেবিল পর্যন্ত। মাস শেষে টাকা, ছুটি বিলাসীতা, অন্যের ক্ষতি এবং খুনোখুনির পরিবেশ সৃষ্টির পরিস্থিতি তৈরী করা৷ বাস্তবতা বলতে কিছুই নেই। এখন কথা হলো কেন নেই? কারণ এদের জবাবদিহিতা ইয়েস স্যার। তাদের কথায় শুধু স্যার স্যার বলে পদোন্নতি আর টাকা আয়। দ্বিতীয়ত, দেশের ভালো হয় এমন কিছুর প্রয়োজনীয়তার তাগিদ না থাকা। সরকার পরিবর্তন হয় ক্ষমতার বদল হয় কিন্তু তাদের স্থায়ীত্বে ব্যাঘাত হয় না তাই।
এবার আসি তারা কোথায় থাকেন, তারা কি দেখেন।
তারা এমন জিনিস দেখে যা আমরা দেখি না। তারা রোহিঙ্গা দেখে না, আমরা দেখি। তাই তাদের চোখে ধরা পড়ে না। আমাদের চোখে পড়ে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে তারা রোহিঙ্গাকে ভোটার করে এদেশকে কানা করতে কিন্তু তা আমরা দেশের জনগন দেশ কানাতে ছিলাম না। রোহিঙ্গা ভোটার করতে যে ল্যাপটপ পর্যান্ত যে হাওয়া করে দিয়েছিল তা সবাই দেখেছে কিন্তু তা নিশ্চুপ ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন একের পর এক খোয়ানো জিনিস উদ্ধার করছে গ্রেপ্তার করছে তখন তাদের বক্তব্য ছিল শিশুর আচরণের চেয়ে খারাপ।
তারা এমন কমিশন যে বাংলাদেশে ভোটারদের অনেকের কার্ড পৌছে দিতে পারেনি। উল্টো হয়রানি করছে নিত্যদিন।
তারা বাংলাদেশের জনগনকে অসংখ্যবার জেলার নির্বাচন কমিশনে উঠানামা করায় কিন্তু রোহিঙ্গাদের ইজ্জত করে ভোটার কার্ডসহ পৌছে দেয়।
তারা আর কি করে? তারা নির্বাচন আয়োজন করলে কেউ যদি অভিযোগ দেয়, তারা ব্যবস্থা নিবে বলে কালের গর্ভে হারিয়ে যায়। তাদের বক্তব্য তারা সব আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে।
এসব গেল, যদি লিখতে চায় লক্ষাধিক শব্দ রচনা করা যাবে তাদের অদক্ষতা নিয়ে। কিনৃতু কিন্তু অবাকের বিষয় এসব কর্মকতা স্বপদে বহাল থেকে গলাবাজি করে।
নিবার্চন কমিশন এই সরকারে ডুবাতে যেসব কান্ড করছে তাতে বিরোধীদলের দরকার নেই। একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায়।
নির্বাচনী এলাকায় পরিবেশ কেমন থাকে ভোটের সময়? এটির উত্তর যদি তাদের জানা না থাকে তাহলে পড়ালেখার যোগ্যতার সংশয় থাকে। যেকোন পাগলও বুঝিয়ে দিতে পারবে এই বিষয়ে। কারণ ভোটকেন্দ্রের আশপাশেও পাগল নিজের নিরাপত্তার ভয়ে ঘুরে না। পক্ষ বিপক্ষের ধাওয়া পাল্টা যাওয়া হলো নৈমিত্তিক ঘটনা।
অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পূজা হয়। আবার নির্বাচনের কেন্দ্রগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। তাহলে কেমনে কি ? অনেক সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষক কি দায়িত্ব পালন করবে নাকি পূজা পালন করবে? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আয়োজিত পূজাতে ধর্মীয় আচার পালন করতে শিক্ষার্থীরা থাকার পরিবেশ কি নির্বাচন কমিশন দিতে পারবে? নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে দায় কে নিবে? এসবের উত্তর কখনও দিতে পারবে না। স্বাভাবিক সময়ে মূর্তি ভাঙ্গার ঘটনা ঘটে সেখানে ঝুঁকিমুক্ত ঝুঁকিযুক্ত কেন্দ্রে প্রতিমা ভাঙ্গলে সম্প্রীতি রক্ষার এমন ঝুঁকি কি তাহলে কমিশন নিবে?
ঈদের সময় যেমন জাতীয় স্থানীয় কোন নির্বাচন আয়েজন করা যায়না। তেমনি পূজার সময়ও নয়। আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে নিজেদের প্রচার করে। নির্বাচন কমিশন, সচিব এবং এধরণের টিম কিভাবে এত ভালো জায়গায় ফোকাসে আসে এখন সেটাই ভাবনার বিষয়। এসব বিষফোঁড়া আওয়ামী লীগকে ও ডুবাতে সময় নিবে না।
এটাও একধরনের আঘাত। এদেশে সব কথায় একটি গোষ্ঠীর আঘাত লাগে। ধর্মের নামে ফতোয়া জারি করে মেয়েদের শিক্ষা ও জীবনযাপন নিয়ে কথা বললে গ্রেপ্তার শুরু হয়। আগ্রহী প্রশাসন, অতিউৎসাহী দলকানা লোকগুলো আসলে চাই সম্প্রীতি নষ্ট হোক।
বয়াতিকে খুনের আসামির মতো তুলে নিয়ে যায় অথচ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা, খুনের আসামিকে তোয়াজ করা হয় এদেশে। এসব অতিউৎসাহীদের রুখে দেয়ার সময় আওয়ামীলীগের এখন প্রধান কাজ। না হয় শেষ হবে সব অর্জন।
এখন লাগাম টানা প্রয়োজন, না হয় আর্দশিক চর্চা থেমে যাবে। স্থবির হয়ে যাবে চেতনার জায়গা। ক্ষমতাসীনরা কেন চুপ নির্বাচন কমিশনের এমন পদক্ষেপে?
ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রটি আসলেই কি মূল স্তম্ভগুলো থেকে সরে যাচ্ছে। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের কথা বলে আপোষহীন ভাবে লড়ে যেতে চাই তাদের জন্য এমন বার্তা তো অশনিসংকেত।
নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্তটি ইচ্ছে করেই সরকারকে বিব্রত করতে নিয়েছে এমন বিশ্বাস আমরা মনে করি। আশা করি বাস্তব বিবর্জিত এমন বিশ্রী সিদ্ধান্ত থেকে কমিশন সরে আসবে।###
নয়ন চক্রবর্ত্তী
রিপোর্টার, দৈনিক দেশ রূপান্তর, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।
-
নিবন্ধ // মতামত
-
14-01-2020
-
-