আমি চুরি - সজল কুমার পোদ্দার
বারোটা বছর কেটে গেলেও নিহার ফিরে আসেনি!
যাবার আগে অবশ্য হাত নাড়িয়ে স্ত্রীকে বলে গিয়েছিল----
সুনন্দা আমি আসছি।
সুনন্দা তাচ্ছিল্যের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বিদ্রুপের হাসি হেসেছিল।
কারণ, নিহার মাঝে মাঝেই সুনন্দার ওপরে বিরক্তি প্রকাশ করে বলতো----
সুনন্দা তুমি এমন করলে আমি সত্যিই একদিন বাড়ি ছেড়ে চলে যাব।
নিহারের বাড়ি ছাড়ার ভয় দেখানো সুনন্দার কাছে ছিল,
গরুর পালে বাঘ পড়ার ভয় দেখানো রাখাল বালকের গল্প।
নিহার অসহিষ্ণুতা মুখে প্রকাশ করে নিজেকে লঘু করত,
দিনের শেষে ফিরে আসত তার সোহাগের ছোট্ট নীড়ে।
তবে নিহারের এই উষ্মা ব্যক্ত করার মধ্যে প্রকাশ পেত সুনন্দার ব্যবহারের অতিষ্ঠতা।
কিন্তু সুনন্দা কখনও আমল দিত না। নিহারকে বোঝার চেষ্টাও করত না কখনো।
উপরন্তু নিজের মতকে নিহারের মাঝে প্রতিষ্ঠা করে বাহাদুরি নিতো বন্ধুমহলে।
বেদ-বেদান্তের মারণ-উচাটন-বশীকরণের সমস্ত মন্ত্রই নিহারের ওপরে প্রয়োগ করে নিজেকে জাদুকরী মনে করত।
সুনন্দার আত্মদর্শনের কাগজি ডিগ্রী ছিল,মানসিকতা ছিল না।
নিহার সুনন্দার খামখেয়ালিপনাকে মেনে নিতে বলে
পৈশাচিক আনন্দে সুনন্দা নিজেকে সফল বলে মনে করত।
নিহারের মেনে নেওয়ার মানসিকতা সুনন্দাকে প্রগলভা করে তুলেছিল।
বিজ্ঞানের প্রমানিক সত্যকে অবজ্ঞা করার সাহস পেয়েছিল।
আসলে,বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সুনন্দার ছিল বন্ধ্যা।
মাতৃত্বের মোহে সে নিহারকে অক্ষমতার কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে পরপুরুষে নিজেকে বিকিয়েছে। কিন্তু মা হতে পারেনি সুনন্দা!
সেঘটনা জেনেও নিহার তাকে মেনে নিয়েছিল।
সুনন্দা মনে করেছিল নিহার তাকে ক্ষমা করেছে।
সমাজ স্বীকৃত বিকৃত মস্তিষ্কের সুনন্দা আজ বুঝতে পারে,
নিহার তাকে সেদিন মানিয়ে নিয়েছিল কিন্তু মেনে নেয়নি।
আজও সুনন্দা নিহারের প্রতীক্ষায় সায়েন্সিটির ভূগর্ভ পথে।
যে পথে সে অগস্ত যাত্রায় বিদায় নিয়েছে।
বিদায় বেলা সুনন্দার হাতে দিয়ে গেছে ওই বছরের বইমেলার বেস্টসেলার 'তেল-নুন' গ্রন্থটি।
বইটা যে নিহারের লেখা ছিল,তা সে বুঝতে পেরেছিল তার বিদায়ের পরে।
নিহার মাঝেমধ্যেই নিজের অসহিষ্ণুতাকে প্রকাশ করত 'তেল-নুন' এর সংসার বলে।
সেদিন বুকফেয়ার থেকে ফেরার পথে সায়েন্সসিটির সাবওয়েতে দাঁড়িয়ে স্ত্রীকে বলেছিল----
সুনন্দা, তোমার জন্য আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার।
গ্রন্থের প্রচ্ছদে গাত্রদহের শব্দটি সুনন্দাকে খেপিয়ে তুলেছিল রক্ত বসন দর্শন করা ষন্ডের মত।
নিহারের বইটা ছুড়ে ফেলেছিল ভূগর্ভের পথে!
হাজার ভিড়ের পা সরিয়ে নিহার 'তেল-নুন' এর বইটা সুনন্দার হাতে দিয়ে বলেছিল,'সুনন্দা আমি আসছি।'
নিহার ভিড়ে গা ভাসিয়ে ফিরে গিয়েছিলো বইমেলার দিকে।
সুনন্দা মনে করেছিল তার জন্য অন্য বই কিনতে গেছে।
তাই সুনন্দা মুচকি হেসেছিল, নিহারের মুখে আসছি কথাটা শুনে।
যে মানুষটা কথায় কথায় 'চলে যাব'বলে ভয় দেখায়,
সে-যে কখনো 'আসছি'বলে জীবনের মতো সন্ন্যাস নিতে পারে সুনন্দা কোনদিন স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি।
সেদিনই সুনন্দা বুঝতে পারেনি তার সহজ ভাবে 'আসছি' কথার মধ্যে লুকিয়ে ছিল না-আসার নিগূঢ় দৃঢ়তা।
কত সহজ ভাবে 'আসছি' বলে জীবনের কঠিন কাজটি করতে পারল নিহার!
সে কথা রাখেনি, আসছি বলে বারোটা বছরেও এলো না!
আজও সুনন্দা সায়েন্সসিটির সাবওয়েতে নিহারের স্মৃতি উগরে জাবর কাটে আর রুগ্ন তর্জনী দিয়ে মাথার পোকা খুঁটতে খুঁটতে চুল প্রায় শেষ করে ফেলেছে।
সুনন্দার সুন্দর মাংসল আঙুলগুলো শীর্ণ হয়ে গেছে
নিহারের 'তেল নুন' বইয়ের পৃষ্ঠা ওল্টাতে ওল্টাতে!
এখন ইচ্ছা থাকলেও সামর্থ্যে কুলায় না।
গ্রন্থের ভারে হাত কাঁপে।পৃষ্ঠা ওল্টাতে গেলে তর্জনীর হাড়ে খট-খট করে শব্দ হয়।
নিহারের পথ চেয়ে চেয়ে সুনন্দা এখন সুড়ঙ্গ পথের স্থায়ী বাসিন্দা।
কর্মব্যস্ত মানুষ আসে যায়।
সকলে আড়চোখে,বুকে আতঙ্ক আর নাকে রুমাল দিয়ে দ্রুত পায়ে অতিক্রম করে তাকে।
কখনো কখনো সে মানুষের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
খাবারের জন্য নয়,একটা পয়সার জন্যও নয়।
নিহার ভেবে মানুষের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
ভুল ভেঙে ফিরে আসে।
সুনন্দাকে মানুষ পাগলি ভেবে ক্ষমা করে দেয়।
মানুষ সুনন্দাকে পাগলি ভাবে!
সুনন্দা নিজেও নিজেকে পাগলি ভাবে!
এ ভাবনা সে অনেকদিন আগে থেকে ভাবতে শুরু করেছে।
যেদিন রাস্তার কুকুর সুনন্দার সিঁথির সিঁদুরকে রক্ত ভেবে চেটে চেটে খেয়েছিল।
সে কোনো প্রতিবাদ করেনি।
সেদিন সুনন্দা প্রথম নিজেকে পাগলি ভেবেছিল।
তারপরে অনেকবার-----
একদিন রাজনৈতিক প্রতিবাদ মিছিলের ওপরে শাসকদলের তাবেদারী পুলিশ লাঠি চালিয়েছিল।
আহত অনাহত বিপ্লবীরা সুনন্দাকে পদপৃষ্ট করেছিল।
উত্তাল জন-ঝড়ের পরে সুনন্দা তার বাঁ হাতের শাঁখার টুকরোগুলো কাপড়ের আঁচলে বেঁধে তিনটে বছর বয়ে বেড়িয়েছিল।
গতবছর সুনন্দা জানতে পেরেছে, তাঁর আঁচলে বাঁধা টুকরোগুলো আসলে ছিল কাপ-প্লেট ভাঙ্গা চিনামাটির টুকরো।
গেলবছর বইমেলা সায়েন্সসিটি থেকে সল্টলেকে স্থানান্তরিত হয়েছে।
সুনন্দা নিহারের খোঁজে গিয়েছিল সেখানে।
একটা দুরন্ত অটো তাঁর দিকে ধেয়ে আসে,
প্রাণ বাঁচাতে সুনন্দা হাত বাড়িয়ে দেয়।
সুনন্দা ডান হাতের শাঁখার বিনিময়ে প্রাণ বাঁচায়।
জ্ঞান ফিরে আসলে সে দেখতে পায় পুরসভার হাসপাতালে।
বেডে শুয়ে সুনন্দা শুকনো চোখ গর্ভগৃহে রেখে নিজের অস্তিত্বকে অনুভব করার চেষ্টা করে।
উপলব্ধি করে বেডশীট আর ওপরে ঢাকা দেওয়া সাদা কাপড়ের মাঝে নিজের নগ্ন-দেহটাকে।
সুনন্দা চিৎকার করে ওঠে------
আমার হাতের শাঁখা!
আমার আঁচলে বাঁধা নিহারের দেওয়া শাঁখার টুকরোগুলো?
সুনন্দার চিৎকার শুনে ডাক্তারবাবু ছুটে আসে,
চিৎকারের কারণ জানতে চাইলে নার্স ফিসফিস করে বলেছিল-----
ডাক্তারবাবু মহিলাটি বদ্ধ-পাগলি!
নোংরা আঁচলে বাঁধা চিনামাটির টুকরোকে বলছে শাঁখা!
আপনি বরং পাগলা গারদে রেফার করে দিন।
সেদিনও সুনন্দা বুঝেছিল সে সত্যিই পাগলি।
তবে সুনন্দা কেবল নিহারের জন্য পাগলি।
সুনন্দা হাসপাতালে সকলের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বেডশীট দিয়ে নগ্ন দেহ ঢেকে নিজেকে আত্মগোপন করে ব্যস্ত শহরের জনস্রোতে মিশিয়ে দেয়।
লক্ষ তাঁর নিহারের বাড়ি।
নিহারের কোন স্মৃতি চিহ্ন নেই তাঁর কাছে।
নেই নিহারের হাতের পরশ সুনন্দার দেহে।
শহরের ধূলি বাতাসে মলিন হয়েছে।
মনের আয়নায় মরিচা পড়েছে,
সুনন্দার চোখটা ঝাপসা হয়ে আসে তার কথা ভাবলেই।
নিহারের দেওয়া জীর্ণ শাড়ি, ময়লার প্রলেপ পড়া শাঁখার দিকে তাকিয়ে সুনন্দা তাঁর মুখ দেখতো, তাঁর সাথে আপন মনে কথা বলতো।
সুনন্দা এখন নিহারের দেওয়া শাড়ি-শাঁখা হারিয়ে নিঃস্ব।
তাই সুনন্দা চলেছে নিহারের বাড়ির পথে।
বাইপাসের ডানে-বাঁয়ে বিলাসবহুল ঝাঁ-চকচকে বাড়ি।
দেওয়ালে জানালায় দরজায় কাচে মোড়া।
সেদিকে তাকাতে ভয় পায়,যদি নিজের ছবিটা দেখে ফেলে!
যদি নিজের প্রতিবিম্ব মৃত্যুর মন্ত্রে বশীকরণ করে!
মরার যদি বাসনা জন্মে!
কিন্তু। সুনন্দা নিহারের মুখোমুখি না হয়ে মরতে চায় না।
নিজের প্রাণটাকে জিওলের মতো বয়ে চলেছে।
সুনন্দা সাদা কাপড়ে ঘোমটা টেনে ঠুলি পরা ঘোটিকার মতো এগিয়ে চলেছে সায়েন্সসিটির দিকে।
হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে সুনন্দা চোখ তোলে আকাশের দিকে।
দ্যাখে,দেহের উপরে নামী কোম্পানির হোর্ডিংয়ের ছায়া।
সুনন্দা বুঝতে পারে,মুখ থুবড়ে পড়া সারদার ফ্রেমের দখল নিয়েছে নতুন কোম্পানির বিজ্ঞাপন।
একদিন এখানে দাঁড়িয়ে নিহার তাকে দেখিয়েছিল, শহরের নোংরা আবর্জনার সঞ্চয়জাত ধাপার পাহাড়।
সুনন্দা সেদিন নিহারকে বলেছিল-----
নোংরা চোখ শুধু নোংরা দেখে আর নোংরা ঘাটে!
নিহার তাকে বলেছিল----
দেখবে সুনন্দা,এই নোংরা পাহাড়ে অদূর ভবিষ্যতে বসন্ত আসবে।
সত্যিই নিহারের ধাপার পাহাড়ে চিরবসন্ত বাসা বেঁধেছে।
পূর্ব দিকে যতদূর চোখ যায় সবুজ আর সবুজ!
মাঝে মাঝে মাছ-পাখিদের নীল জলাশয়।
পশ্চিম দিকে সারিসারি গগনচুম্বী ইমারত।
মাঝখান দিয়ে সশব্দে প্রবাহমান বিপরীত স্রোতে গাড়িদের নদী।
কূল ঘেঁষে যাওয়া উড়ন্ত মেট্রোপুলের অসমাপ্ত স্তম্ভে সুনন্দা থমকে যাওয়া ভাসা-কচুরিপানা।
বুকের পাঁজর ঠেলে দমকা হাওয়া বেরিয়ে আসে।
শুকনো চোখে হাত বুলিয়ে অন্তরের অশ্রু মুছে সামনে বাড়তে থাকে সুনন্দা।
মেঠো ইঁদুরের মত মাটির গন্ধ শুকতে শুকতে সুনন্দার পৌঁছে যায় নিহারের এককালীন শান্তি-সদনে।
মনে পড়ে তার,যেদিন ব্যাংক তাকে বাড়ির বাহির করেছিল লোনের টাকা অনাদায়ের জন্য।
চোখের সামনে নিলামে বিক্রি হয়েছিল নিহার-ভিলা।
বিক্রি হয়েছিল নিহারের গল্প-কবিতা লেখা দোতালার বনবীথিকার মত ব্যালকনিটা।
সেদিন অনেক কেঁদেছিল সুনন্দা,
এখন হৃদয় কাঁদলেও চোখে আর সায় দেয় না।
সিভিক-ট্রাফিকের ইশারায় বাইপাস থেকে বাঁ-গলি ধরে পঞ্চানন তলার পথে সুনন্দা।
পায়ের তলায় চোখ রেখেই বুক কেঁদে ওঠে ব্যর্থ প্রত্যাশায়।
নিহারের পায়ের ধুলি মাখা স্মৃতি ঢেকে গেছে উন্নয়নের মসৃণ পিচের প্রলেপে।
নিলাম বিজয়ী নন বাঙালি আপন রঙে,আপন ঢঙে রুপ বদলিয়েছে নিহারালয়ের।
সকল স্মৃতি ঢেকে দিয়েছে রাজস্থানী মোড়কে।
প্রাচীরের পাশে পড়ে থাকা শ্যাওলা পড়া সিকি ইঁট তুলে নিয়ে সুনন্দা রওনা হয় সায়েন্সসিটির সাবওয়েতে।
পাগলির হাতের ইঁটের ঢিল দেখে পথিকরা
গা বাঁচিয়ে দূর পথে চলে।
সুনন্দা বিড়বিড় করে বলে----
নিহারের সংসারে বারোটা বছর আমি ছিলাম পাগলি,
বড় ঘরের ভদ্র পোশাকে মোড়া সুনন্দা ছিল সমাজের কাছে স্বাভাবিক!
আজ যখন নিজেকে নিজে চেনার জ্ঞান অর্জন করেছি,
হারিয়েছি জীবনের সব আভরণ,জাগিয়েছি মনের বুদ্ধ।
তখন সমাজের কাছে আমি হয়ে গেলাম পাগলি!
হাতের ইষ্টককে বজ্র করে শুকনো বুককে রুদ্র করে সুনন্দার শীর্ণ-চরণ গতিপথ পরিবর্তন করে।
হাতের তালুর মতো চেনা কলকাতার রাজপথ ও অলিগলি।
রাতের আঁধার বুকে ঠেলে প্রভাত অরুণের মত উঁকি দিয়েছে আলিপুর ধর্মাবতারের দরবারে।
হাসপাতালের মোটা একফালি ক্যানভাস কে করেছে উত্তরীয়-পরিধান।
পথের বাঁকে হাতের নাগালে ল্যাম্পপোস্টে ঝোলা অবাঞ্চিত বিবর্ণ জীর্ণ বামপতাকাকে করেছে শিরের নিবি।
হাতের মামুলি ঢিল যেন অশ্বপৃষ্ঠে অধিষ্ঠিতা রাজিয়ার হাতের বজ্র-অশি।
বুকে কৈফিয়তের বাঁধ ভাঙ্গা নদীর জলোচ্ছ্বাস।
চোখ যেন শত বীরঙ্গনার পুঞ্জাক্ষি, কন্ঠে ঈশানের বিষাণ!
পা দুখানি পিছাবনীর রণমাতঙ্গিনী।
শরীর জুড়ে দুরন্ত বন্য মহিষের ক্ষিপ্রতা।
সময়ের সাথে বাড়তে থাকে অন্ধদেবীর কাননে মধুমক্ষিকার আইন বিচারের গুঞ্জন।
সুনন্দার সমস্ত প্রতীক্ষার অবসান হলো গাড়ির বাহাদুরী হর্নে।
গাড়ির সামনে লেখা দেখে সুনন্দা বুঝতে পারে জজ সাহেবের আগমন।
মুহুর্তের মধ্যে হাতের ভিজে সবুজ ইঁটটাকে বুকে চেপে আত্মঘাতী বোমার মত জজসাহেবের পথ রুদ্ধ করে দাঁড়িয়ে বলল---
আমি সুনন্দা সান্যাল বলছি।
কেউ আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না ।
আমি আত্মঘাতী ডিনামাইট।
মরার আগে জজসাহেবের কাছে বিচার চাইতে এসেছি।
বিচার না পেলেও ক্ষতি নেই,শুধু জানতে চাই আমার অভিযোগের কোনো যৌক্তিকতা আছে কিনা।
থমথমে পরিবেশে যারা আতঙ্কে,তারা দূরে পালিয়েছে।
কাছের যারা তারা আরো কাছে এসেছে কৌতূহলে।
জজসাহেব খুলে দিয়েছে জানালার কালো কাঁচ।
সুনন্দা জজসাহেবের চোখে চোখ রেখে বলল----
চেয়ে দেখুন জজসাহেব,সকলের নিথর চোখে মৌন মনের কৌতূহলী প্রশ্ন।
এমনকি আপনারও!
সকলের মনের প্রশ্ন পাগলী কিসের বিচার চাইছে! আমাকে বিশ্বাস করুন,আমার বিবেকের কাবা-মন্দিরে হাত রেখে বলছি-----
যাহা বলিব সত্য বলিব,
সত্য বয়কি মিথ্যা বলিব না।
জজসাহেব 'আমি চুরি' হয়ে গেছি!
'আমি চুরি' হয়ে গেছি!!
আমি চুরির বিচার চাই।
কাঁদতে কাঁদতে সুনন্দা নিজেকে সম্বরণ করে পরাজিত সৈনিকের মত।
পিছন থেকে জনাকয়েক নির্জীব পুলিশের কলুষিত হাত তাঁর গায়ে পড়ল।পাশে দাঁড়ানো পুলিশ-ভ্যান।
তাঁদের দিকে তাকিয়ে সুনন্দা হুশিয়ারি সুরে বলল----
দয়া করে আমাকে স্পর্শ করবেন না।
আর একবার জজসাহেবের দিকে চেয়ে বিনম্র সুরে বলল---
জজ সাহেব আপনি ওদের বলে দিন,
ওরা আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে।
কারাগারে?নাকি পাগলা-গারদে??
সজল কুমার পোদ্দার । নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ
-
গল্প//উপন্যাস
-
01-02-2020
-
-