অটোয়া, বৃহস্পতিবার ২ মে, ২০২৪
সুনির্মল বসুর গদ্য কবিতা

ঝরা পাতার কান্না
বর্ষায় জল থৈ থৈ নদী দেখলে, দ্বীপের মধ্যে পলাশ-বনে অজস্র আগুনরঙা ফুল ফুটে উঠলে,
আম গাছে নতুন মুকুল এলে, সোমলতা,
তোমাকে মনে পড়ে,
খুব ভোরে শিশির ভেজা ঘাসে তোমার সঙ্গে হেঁটে যাবার স্মৃতি মনে পড়ে, নদীতীরে কৃষ্ণচূড়া গাছের ছায়ায় কত বিকেল কেটেছে আমাদের,
এখন আমি একলাই যাই,
নদী আকাশ সঙ্গীহীন নৌকা চেয়ে দেখি,
ভাগ্যিস তোমাকে পাইনি, তাই ভালোবাসা জেগে আছে, নিউল্যান্ডের দুর্গা পূজার প্যান্ডেল, জনতা রেস্টুরেন্ট, সু তৃপ্তির মিষ্টির দোকান, নদীর ধার সে কথা জানে,
তোমাকে পেলে, প্রতিদিনকার ধূলিমলিনতায় এভাবে তোমাকে পেতাম না,
এখন যখন খুশি, তখন তোমাকে পাই,
 স্বপ্নে কতদিন তোমার সঙ্গে হেঁটে যাই, নীল জ্যোৎস্নায় তোমার সঙ্গে নদীর তীরে এসে দাঁড়াই, মধ্যরাতে তোমার সঙ্গে আকাশের তারা গুনি, গম্বুজওয়ালা প্রাসাদের চূড়ায় দাঁড়িয়ে পায়রা ওড়াই, তোমাদের নীল কাচের বাড়ির বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তোমার গাওয়া রবি ঠাকুরের গান শুনি,
দুর্গাপুজোর মহাষ্টমীর সন্ধ্যায় তোমার সঙ্গে প্রতিমা দেখতে বের হই, রাতে স্বপ্নে তুমি আমার কাছে জ্যোৎস্নায় ভিজে আসো, চারদিকে উদাস হাওয়া বয়ে যায়, স্বপ্নে নীল সমুদ্র সৈকতে তুমি আর আমি জল ছুঁয়ে ছুঁয়ে হেঁটে যাই,
সোমলতা, তুমি এখন পরস্ত্রী, তোমাকে পাইনি বলে আজ আমার মনে কোনো গোপন কষ্ট নেই,
আমার ভালোবাসায় অবিকল তুমি আগের চেয়ে অনেক বেশি করে বেঁচে আছো,
শুধু বসন্তের দিনে কৃষ্ণচূড়া গাছ লালে লাল হলে, চোখে জল আসে,
হেমন্তে পাতা-ঝরার কালে আমার ভারী কান্না পায়,
আসলে, জীর্ণ পাতার মতো আমিও যে তোমার জীবন থেকে ঝরে গেছি।

একদিন আকাশ খুঁজতে বেরিয়ে
আমার আকাশ পেরিয়ে বহু দূরে তোমার আকাশ, আমি আকাশ খুঁজতে বেরিয়েছি,
কতদিন ভালো করে আমি আকাশ দেখি নি,
নীল আকাশ, সাদা মেঘের বর্ণমালা, মেঘের মিনার, মেঘের স্বপ্নপুরী,
নিচে তাকিয়ে দেখি, আমার আকাশে ভাসমান মেঘের মেলা, শূন্য থেকে আমি আবার যেন একটা আকাশ দেখছি,
প্রিয় মানুষ, প্রিয় মুখগুলো মনে ভাসছিল,
মনে মনে বললাম, সবার ভালো হোক, তখন মুখর এই আনন্দলোক,
এভাবে রঙের খেলা দেখিনি কোনো দিন,
হৃদয়ে বাজলো আনন্দের বীণ,
জীবনের কাছে রেখে গেলাম কত অগণিত ঋণ,
মনে হল, প্রিয় মানুষগুলো সবাই যদি আমার পাশে থাকতো, আমার পূর্বপুরুষেরা কি এখানেই থাকেন,
নীলাঞ্জনা, আজ আর তোমাকে না পাওয়ার বেদনা আমাকে কাঁদায় না,
আমি এখন অন্য আকাশ খুঁজতে বেরিয়েছি,
মহাশূন্যে, অসীম লোকে আমার বিচরণ, কত পাহাড় নদী সমুদ্র বন্দর পেরিয়ে, কত প্রাসাদ অট্টালিকা, কত দরিদ্রের পর্ণকুটির অতিক্রম করে,
আমি আজ সুন্দর কে প্রণাম জানাতে যাচ্ছি,
তিনি পাহাড়চূড়ায় থাকেন,
ডেকে বললেন, আয় যাবি, তোর চোখের জল আমি মুছিয়ে দেবো, তুই ভালোবাসার পুকুরে সারা জীবন কাদা মেখেছিস্, ভালোবাসার সমুদ্র কোনদিন দেখিস নি, উদার গিরিচূড়া, ধ্যান গম্ভীর ফুলের উপত্যকায় তোর ভালোবাসার জন আছেন, যাবি,
বললাম, যাবো তো, এত ভুল রয়েছে জীবনে, এত পরাজয়,
তিনি বললেন, অমন তো সব জীবনেই হয়,
আমি কি করে যাবো,
তোকে নিয়ে যাব বলেই তো ডাকলাম,
আমি যাচ্ছি, কিন্তু কেন যাচ্ছি বুঝতে পারছি না,
যেখানে যাচ্ছিস, সেখানে যাচ্ছিস মোহ আবরণ দূর করবার জন্য,
মানে,
মায়া টান,
আপনি কি চান,
এ আকাশ, এই পাহাড়, ওই ফুলের উপত্যকায় এলেই বুঝতে পারবি,
কি দেখব এখানে,
সৃষ্টি ও ধ্বংস, জগতের সত্য,
আর ভালোবাসা,
যা রেখে এসেছিস, তা ভালবাসা নয়, মোহ,
সত্যি,
সত্যি ভালোবাসা হলে নীলাঞ্জনা চলে যেত না,
আপনি বলছেন,
হ্যাঁ আমি বলছি,
কিন্তু আমি যে এ আকাশ খুঁজতে বেরিয়েছি,
চেয়ে দ্যাখ্, দৃষ্টিকে প্রসারিত কর্,দ্যাখ্ চারদিকে,
দিগন্তের দিকে চেয়ে দ্যাখ্,
কি দেখবো,
ভালবাসার আকাশ,
সত্যি চেয়ে দেখি, চরাচর ব্যাপী অমিয় সৌন্দর্য,
দেখতে পেলি,
দেখলাম, আনন্দধারা বহিছে ভুবনে।

সুনির্মল বসু। পশ্চিমবঙ্গ, ভারত