অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
করোনা বনাম ধর্মীয় ভাইরাসের সংক্রমণের ব্যপ্তি – সুপ্তা বড়ুয়া

কি একটা অদ্ভুত সময় আমরা পার করছি। সমস্ত শহর লকডাউন, কোয়ারান্টাইন, সেল্ফ-আইসোলেশন নামে নিত্য নতুন শব্দের সাথে পরিচিত হয়ে আমরা অতিবাহিত করছি জীবন, কোভিড-১৯ বা করোনা এর কারণে। বিশ্ব-পরিস্থিতি এবং বিশ্ব-অর্থনীতিতে চরম এক ধাক্কা, যেন একটা ঘুম ভাঙানিয়া হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এই কোভিড-১৯।

যদিও ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে চীনের উহান প্রদেশে এই রোগের সূত্রপাত হয় বলে বিভিন্ন সূত্রের খবরে বলা হচ্ছে, তথাপি চীনা সরকারি নথিপত্র অনুযায়ী ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে এ রোগ সংক্রমণ হতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ পাওয়া যায়। এই রোগে চীনে মৃতের সংখ্যা তিন হাজারের কিছু বেশি। বিশ্বে মানুষের ভ্রমণের কারণে, এই রোগটি চীনে শুরু হলেও নানা দেশে ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় নেয় নি। পরর্বতীতে ইতালি, ইরান, কানাডা, আমেরিকা থেকে শুরু করে পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এ রোগ। এ পর্যন্ত ইতালিতেই মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, যা চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে। এই ভাইরাসজনিত রোগের এখনো কোন প্রতিষেধক পাওয়া যায় নি বা আবিষ্কার হয় নি। প্রত্যেক দেশের সরকাররা তাই এই ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে নিজ নিজ দেশের জনগণকে ঘরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও এই রোগ ৩-৪ মাস আগে থেকেই বিস্তার লাভ করতে শুরু করেছে, কিন্তু পাশ্চাত্যের দেশসহ কোন দেশই এ সম্পর্কে তেমন কোন প্রস্তুতি নিতে দেখা যায় নি। আমার এ লেখার উদ্দেশ্য কোন সরকার কোন পদক্ষেপ নিয়েছে বা ক্ষয়ক্ষতি কতটুকু হয়েছে বা এই আলোকে পরবর্তী পৃথিবীর রূপরেখা কি হবে সেটা নির্ধারণ করা নয়। বরং এই ভাইরাসের চেয়ে আরো অধিক ক্ষতিকর ভাইরাসগুলো যে বছরের পর বছর আমরা বহন করে চলেছি, সেই ভাইরাসগুলো যে কোভিড-১৯-এর থেকেও ভয়াবহ-ভয়ঙ্কররূপে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে সে সম্পর্কে একটু কয়েক লাইন লেখা।

কোভিড-১৯ বা করোনা আমাদের কতটা ক্ষতি করবে সে আমরা জানি, আমরা জানি এটা আমাদের মৃত্যু ঘটাবে। কিন্তু ধর্ম, জাতীয়তাবাদ, স্বার্থপরতায় এ গ্রহের মানুষ ছাড়িয়ে গেছে এই ভাইরাসকে, মানুষের আত্নার মৃত্যু ঘটিয়ে চলেছে দিনরাত এই ভাইরাসগুলো। আমরা কি আদৌ এ লোভী স্বার্থপর পৃথিবীতে বেঁচে আছি ঠিকমতো? কোভিড -১৯ শুরু হওয়ার প্রথমদিকে পশ্চিমা বিশ্বে এ ভাইরাসটি সম্পর্কে নানা ধরণের ভূল তথ্য প্রচার করা হচ্ছিলো। ভাইরাসটিকে খোদ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ‘চীনা ভাইরাস' বলে অভিহিত করেছিলেন। তাছাড়া স্কুলে স্কুলে চীনা বংশোদ্ভূত বাচ্চারা ‘bully’ হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছিলো। খোদ আমারই কানাডিয়ান বন্ধু, যার স্ত্রী চাইনিজ, তার কন্যা স্কুলে ‘bully’ হয়েছে বলে ফেইসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে একটা স্ট্যাটাস দেয়। যেখানে খোদ বিশ্ব মোড়ল বলে খ্যাত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট’ই একটি ভয়াবহ ভাইরাসের সংক্রমণের প্রাক্কালে সেই ভাইরাস প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নিয়ে জাতীয়তাবাদ উসকে দেয়, সেখানে ছোট ছোট স্কুল বাচ্চাদেরই’বা আমরা দোষ দেই কি করে! অজ্ঞানতা আর মিথ্যে তথ্যের উপর ভিত্তি করে পশ্চিমা বিশ্বে চললো এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা, বাবা-মায়েরা সন্তানদের ভাইরাসটি সম্পর্কে অবহিত করতে ব্যর্থ হলো। কয়েক জায়গায় চীন বংশোদ্ভূতদের উপর শারীরিক আক্রমণেরও খবর পাওয়া যায় ফেব্রুয়ারীতে। বলতে গেলে মানুষের মধ্যে বর্ণ-বৈষম্য, জাতি-বৈষম্যের যে বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্বময়, তা একেবারে স্পষ্ট হয়ে ওঠে সারা পৃথিবীতে। 

কোভিড-১৯ আতঙ্কের মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ কাজে দেশে যেতে হলো। পরিস্থিতি ছিলো ঘোলাটে, নানা উৎকন্ঠা আর দুশ্চিন্তায় তবুও রওয়ানা হয়ে গেলাম দেশের উদ্দেশ্যে। কখনো কখনো দায়িত্বপালন না করাটাই হয়ে ওঠে বড় আতঙ্ক। বাংলাদেশের আকাশে বিমান উড়ছে, আর কিছুক্ষণ পরই বিমান অবতরণ করবে ঢাকা এয়ারপোর্টে। পাইলট ঘোষণা দিচ্ছে, ইংরেজি, আরবী এবং বাংলায়, ‘প্লেন যতক্ষণ সম্পূর্ণরূপে না থামবে ততক্ষণ সম্মানিত যাত্রীবৃন্দ আপনারা নিজের আসন থেকে  উঠবেন না’। কিন্তু কে শোনে কার কথা! প্লেন মাত্র ঢাকার মাটি স্পর্শ করেছে, পুরোপুরিও না, মনে হয় চাকা দুটো শুধু লাগলো রানওয়েতে, প্লেনের সব যাত্রী উঠে দাঁড়িয়ে গেলো। সীটের উপরে স্টোরেজ কমপার্টম্যান্টগুলো খুলে ফেললো, প্লেন তখনো চলছে, লাগেজগুলো তরতর করে কাঁপছে আর মনে হচ্ছে এক্ষুনি কারো মাথায় পড়বে। এয়ারহোস্টেজ কয়েক দফা অনুরোধ করলো বসতে, কিন্তু কেউ যখন বসছে না চিৎকার দিয়ে বসার জন্য বললো। প্রায় সবাই বসে গেলো, কিন্তু দু'তিনজন তখনো দাঁড়িয়ে রইলো আর মাথার উপর কমপার্টম্যান্টগুলোও খোলা। আমি আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। বললাম, ‘ভাই একটু ওগুলো বন্ধ করে আপনারা বসুন। নয়তো ওগুলো সব মাথার উপর পড়বে, কারণ প্লেন এখনো চলছে’। আমার সীট পড়েছিলো দুজন হজ্ব যাত্রীর পাশে, তারা আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকাচ্ছেন। এবার মনে হতেই পারে, এই ঘটনাটির সাথে কোভিডের কি সম্পর্ক? লেখার আরেকটু পরের দিকে এর উত্তর আছে।

বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ দেশ, জনসংখ্যার ভারে নুইয়ে পড়া একটা দেশ। এখানে কোভিডের মতো রোগ ছড়ালে, কি অবস্থা হতে পারে, সরকার কি তা আগে থেকেই জানতেন না? সারা বিশ্বে এটার ব্যাপকতা বাড়ছে দেখেও দেশে তখন চলছিলো বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের তোড়জোড়। বিশাল আকারে জন সমাবেশের সমারোহ। যদিও শেষ মুহূর্তে সমালোচনার মুখে সরকার করোনাকে অজুহাত দেখিয়ে এ আয়োজন সীমিত আকারে করলো। কিন্তু বিশ্ব যখন একটা মহামারীর দাঁড়প্রান্তে দাঁড়িয়ে, তখন একটি দেশের সরকার কি করে এতটা কান্ডজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিতে পারে? পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যবস্থা না নিয়ে কিভাবে দেশে ঢুকতে দিতে পারে প্রবাসীদের? এ যেন সাদরে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে মৃত্যুকে। সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালে কোন ধরণের পূর্ব প্রস্তুতিই ছিলো না। এই সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে স্বার্থপরতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছি আমরা। যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ পিপিই’ই ছিলো না ডাক্তার-নার্সদের জন্য, সেখানে যে স্বল্প সংখ্যক পিপিই আছে সেগুলো নিয়ে বসে আছে আমলা, জেলা প্রশাসক, ব্যাংকার। আক্রান্তদের সেবা দিবে কে, জেলা প্রশাসক নাকি ডাক্তার-নার্স? কাদের সুরক্ষার দরকার সর্বপ্রথম এবং সর্বাপেক্ষা? ওয়াও, কি অদ্ভুত ব্যবস্থা আমাদের! এ অবস্থা দেখে রাগে-ক্ষোভে কি লিখবো বুঝতেই পারছি না। দেশী প্রতিষ্ঠান- মার্ক এন্ড স্প্যান্সার, বিদ্যানন্দ, চীনা প্রতিষ্ঠান- আলীবাবা এগিয়ে আসছে ডাক্তার-নার্সদের সুরক্ষার জন্য। আর এ সময়ে সরকারের আমলা-কামলাদের এমন বিবেচনাবোধহীনতা বিবেকহীনতার পরিচয় জাতি হিসেবে নিজেকে লজ্জায় একেবারে শেষ করে দিলো। স্বার্থপরতায় কতটা উচ্চতায় পৌঁছোলে মানুষ এমন করতে পারে! আমাদের তো এজন্য পুরষ্কার পাওয়া উচিত!

এবার আসুন জনগণের কথায়। সারাদেশ দেরীতে হলেও সরকার লকডাউন করেছে, স্কুল-কলেজ বন্ধ করেছে, অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সবাইকে বাসায় থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু মানুষ যেন সবকিছু থেকে ছুটি পেয়ে ঈদের আমেজ পেয়েছে, আর সঙ্গে সঙ্গে কেউ ছুটছে পিকনিকে, কেউ ছুটছে সমুদ্র ভ্রমণে, কেউ ছুটছে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে। কিছুক্ষণ আগে প্লেনের ঘটনাটি বললাম, এই জন্যই। বাঙালীকে আপনি সহজ কথা সহজে বোঝাতে পারবেন না। এদেরকে আপনি একই কথা নিজ মাতৃভাষাতেই বোঝালেও এরা বুঝবে না। এদের দরকার ধমক, এদের দরকার হুমকি-ধমকি, যেমনটা দিয়েছিলো এয়ারহোস্টেজ। কোয়ারান্টাইনে থাকা বিদেশফেরতরা যাচ্ছে বাস কাউন্টারে টিকেট কাটতে! দলবেঁধে ঠ্যালাঠেলি করে বাস, লঞ্চ, স্টীমারে করে মানুষ ব্যস্ত ভ্রমণে। 

তবে একটা সুখবর জানাই, আমার এতটুকু লেখার পর মনে হতেই পারে শুধু বাংলাদেশের জনগণই বোধয় এমন। কিন্তু অল্পবিস্তর হলেও পশ্চিমা দেশের মানুষের মধ্যেও, কিংবা আমাদের পাশের দেশেগুলোতেও সর্বত্রই যেন মানুষ রোগটাকে পাত্তাই দিচ্ছে না। মন্ট্রিয়লে কোভিড পজিটিভ একজন বাড়ি থেকে বের হওয়াতে পুলিশ গ্রেফতার হয়েছে, লন্ডনে শুনলাম একজন কোয়ারান্টাইন রোগীকে ১০০০০ ইউরো ফাইন করা হয়েছে, ইতালিতে নাকি এখনো সুন্দরীরা সৌন্দর্য চর্চায় বিউটিপার্লার থেকে বিরত থাকতে পারছে না, লন্ডনে গত রোববার উইকেন্ডে বারবিকিউ পার্টি হয়েছে। ইতালিতেই এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যার সবচেয়ে বড় কারণ সরকারী নির্দেশ মতো জনগণ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে নি। আর এদিকে কানাডা প্রধানমন্ত্রী জনগণকে কড়া ভাষায় বললো ‘Enough is enough! Go home people’!  আর এশিয়ায়, শ্রীলঙ্কায় ৩০০ জনের অধিক গ্রেফতার হয়েছে কোয়ারান্টাইন না মানায়, ভারতে পুলিশ প্যাদাচ্ছে দেখলাম রাস্তায় বের হওয়া ছেলেদের। আচ্ছা এই ছোট একটা নির্দেশ মানতে মানুষের এত কষ্ট হচ্ছে কেন? চরম শঙ্কা আর উৎকন্ঠার মধ্যে শেষ পর্যন্ত যথাসময়ে কানাডা পৌঁছেছি, কিন্তু এয়ারপোর্টে দেওয়া নির্দেশ মতো ১৪ দিন self-isolation-এ আছি। সন্তানদের আজ তিন সপ্তাহ দেখছি না, কিন্তু ওদের দেখার চেয়েও ওদের সুস্থ থাকাটাই তো বেশি জরুরী। মানুষ নিজের ভালোটাও সহজে কেন বোঝে না?

কোভিড-১৯ কিংবা করোনা, এই ভাইরাসের প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কার হয় নি। তবে বিজ্ঞানীরা দিনরাত পরীক্ষা করছেন এর প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য। কিন্তু ধর্মীয় ভাইরাস থেকে আমরা কিভাবে মুক্ত হবো? ধর্মীয় ভাইরাস যে করোনা থেকে ভয়ঙ্কর, সেটা তো কেউ স্বীকারই করছে না! বাংলাদেশে মসজিদে মসজিদে মাইকে প্রচার করা হচ্ছে মসজিদে এসে নামাজ পড়ার জন্য, যেখানে সরকার জনসমাগম যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে বললো। পাকিস্থানে মসজিদভিত্তিক জনসমাবেশ বন্ধ করতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে মসজিদগুলোতে, কিন্তু বাংলাদেশ সরকার কি এ ব্যবস্থা নিতে পারবে? খোদ সৌদি আবর এবং অন্যান্য ইসলামিক রাষ্ট্র ঘরে ঘরে নামাজ আদায় করতে বললো, সেখানে বাংলাদেশের জনগণ মসজিদে নামাজ পড়তে দেওয়া না হলে সরকারকে দেখে নেবে বলে হুশিয়ারি জানাচ্ছে, শহরে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের হচ্ছে মসজিদেই তারা নামাজ আদায় করতে দিতে হবে। আবার এদিকে কয়েকটা সংগঠন মুসলমানদের ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু হবে না বলে লিফলেট বিতরণ করছে, ‘মুসলমানদের জন্য করোনা ভাইরাস কোন আতঙ্কের কারণ নয়, বরং কাফিরদের জন্য কঠিন আযাব-গজব’! ওয়াজে ওয়াজে মুসলমানদের করোনার জন্য সরকারী নির্দেশমালা মেনে না চলতে উৎসাহ দিচ্ছে। জনগণকে ভুল পথে পরিচালিত করছে ধর্ম, বলতে গেলে মৃত্যু পথে ঠেলে দিচ্ছে। লন্ডনে ২৫% করোনা আক্রান্ত রোগী মুসলমান এবং প্রায় সব কেইসই মসজিদের সাথে কোন না কোনভাবে সম্পৃক্ত। এখন আপনার মনে হতেই পারে শুধু মুসলমানদের মধ্যেই এমন ধর্মান্ধতা কিংবা কুসংস্কার আছে! মোটেই নয়। কিছুদিন আগে আমার ইনবক্সে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের একটি লিফলেট এসে পড়লো, তাতে বলা হলো, ওই বার্তাটি ২০ জনকে ফরোয়ার্ড করতে হবে, তাহলে করোনা হবে না। চীনারা নাকি কারা কারা ওটি ফরোয়ার্ড না করে ‘হা হা' রিয়্যাক্ট দিয়েছিলো তাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। পূর্বেও আমাদের গ্রামে এরকম লিফলেট আসতো, আর আমাদের হাতে লিখে এগুলো অন্যদের দিতে হতো। একবার একজনকে বলেছিলাম, এগুলো সব ভুয়া। তখন সে আমায় বলেছিলো, ভুয়া হলেও এসব তো কারো ক্ষতি করছে না, তাহলে একটু কষ্ট করে লিখে এগুলো পুনরায় বিলি করতে অসুবিধা কোথায়? বুঝতে পেরেছেন, কুসংস্কারগুলো কিভাবে জায়গা করে নিয়েছে সমাজে? আমাদের প্রায়সময়ই কুসংস্কারের পক্ষে এভাবে বলা হয়, এই কুসংস্কারগুলো তো কারো ক্ষতি করছে না, তাহলে এগুলো থাকলে সমস্যা কোথায়? সমস্যাটা এখানে, আজকে যখন কোভিড বা করোনা’র কারণে মানুষকে পরিচ্ছন্ন থাকতে বলা হচ্ছে কিংবা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে, তখন এসব লিফলেট মানুষকে এই কথা বোঝাচ্ছে, পরিচ্ছন্ন থাকা কিংবা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয় যতটা গুরুত্বপূর্ণ এই লিফলেটগুলো করোনা’কে বিতাড়িত করতে। যার ফল হতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়। ওদিকে হিন্দুরা তো করোনা’কে মা'ই বানিয়ে ফেললো, তারপর সেই করোনা মা'কে নিয়ে মানুষ ডেকে মন্ত্রতন্ত্র পাঠ শুরু হয়ে গেছে। আবার আরেকদল করোনা থেকে বাঁচতে গো-মূত্র পান, গোবর দিয়ে সারা শরীর ঢেকে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াচ্ছে। যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হলো, সেখানে করোনা'কে একেবারে ঘাড়ে তুলে নিচ্ছে জনগণ, পুরোহিতরা সবাই মিলে। বাজারের এই মন্দ সময়ে পুরোহিতদেরও তো কিছু একটা করে খেতে হবে, তাই করোনা'কে তাড়াতে একটু পূজাদি করলে কি'ই বা আর আসে যায়, তাই না? মরলে মরুক কয়েক হাজার/লক্ষ পাগল-বুদ্ধিহীন জনগণ। আবার পোপ শুনলাম গডের কাছে স্পেশাল রিক্যুয়েস্ট পাঠিয়েছেন করোনা থেকে মুক্তিলাভের জন্য।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞানই দিবে আমাদের এ অবস্থা থেকে মুক্তি। কোভিড-১৯/করোনা থেকে আমরা মানুষেরা মুক্তির উপায় বের করে ফেলতে পারবো বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির কল্যাণে। কিন্তু মানুষের স্বার্থপরতা, জাতীয়তাবাদ, ধর্মীয় উগ্রবাদ আর অন্ধকার থেকে কবে এ গ্রহের মানবকূলের মুক্তিলাভ হবে?

সুপ্তা বড়ুয়া । অটোয়া, কানাডা