অটোয়া, শুক্রবার ১৮ অক্টোবর, ২০২৪
বাদাইম্যা (পর্ব-৭) – কবির চৌধুরী

     রাত প্রায় ৩টা- ডোনাল্ড প্লাজার টিমহরটন্সের সামনে পার্কিং লটে লাক্সারিয়াস গাড়ীর ড্রাইভিং সীটে বসা পাওলার মেহেদিরাঙ্গা ডান হাত ধরে হানিফ কতক্ষণ বসা ছিল মনে নেই- হঠাৎ পাওলার কথায় সে বাস্তবে ফিরে আসে। 
     রাস্তার ট্রাফিক সিগনালের লাল-সবুজ-হলুদ বাতির সাথে আকাশের জোছনা আর সেন্ট লোরেন্ট স্ট্রিটের দু’পাশের নিয়ন লাইটের ঘোরলাগা বিচ্ছুরণ দেখতে দেখতে হানিফ সদ্য কেনা সিগারেট জ্বালাতে যাবে, তখনই পকেটে রাখা ফোনটি বেজে উঠে- পাওলার ফোন।
     এত রাতে!
     কি করেন? 
     হাঁটছি আর সিগারেট খাচ্ছি- 
     হাঁটতে থাকেন, আমি আসছি-
     এখন!
     হু
     বাড়ীর সামনেই পাবেন।

     বিশ-পচিশ মিনিটের মধ্যেই পাওলা চলে আসে। দেখার ইচ্ছা! খুব ইচ্ছা হচ্ছিল, তাই চলে আসলাম।
     ভাল করেছেন। আমিও আপনার কথা ভাবছিলাম। বাসায় আসেন।
     না, অনেক রাত। সবাই ঘুমাচ্ছে। টিমহরটন্স বা লং ড্রাইভে চলেন।
     আগে কফি। তারপরে অন্যকিছু।

     রাস্তা একেবারে ফাঁকা। মনে হচ্ছে অনেক রাত, কিন্তু মাত্র সাড়ে এগারোটা। অন্যান্য দিন এসময় শহরের বড় বড় রাস্তাগুলো বিশেষ করে কুইন্সওয়ে বেশ বিজি থাকে। করোনা ভাইরাসের কারণে জনজীবনে একধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে। কিছু বোঝা যাচ্ছে না। কি হবে। একারণেই হয়ত রাস্তাঘাটে গাড়ীর সংখ্যা খুব কম। 
     কফিতে চুমুক দিতে দিতে হানিফ জিজ্ঞেস করে, - দুনিয়াদারীর খবর কি?
     দুনিয়াদারীর খবর! দেখছেন না করোনা কি করছে। চায়নার অবস্থা তো খুব খারাপ। 
     শুধু কি চায়নাঁ? ইটালী? এ সপ্তাহে তো স্পেন এবং ইরানেও মারাত্মক আঁকার ধারণ করেছে।
     হুম! আজ দেখলাম ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগেনাইজেশান বলছে, ভাইরাসটি পুরো বিশ্বজুড়ে মহামারী আঁকারে দেখা দিতে পারে।
     এসব বাদ দেন। অন্যকিছু বলেন। পত্রিকা পড়া হয়?
     তা প্রতিদিনই দেখি। খুব ভাল হচ্ছে। অনেক লেখা- অনেক লেখক। সবাই ভাল লিখছেন। ও আচ্ছা জিজ্ঞাসা করতে ভুলে গেছি- হঠাৎ করে কবিতা লেখার শখ হলো কেন?
     

    না তো! আমি কবিতা লিখি না। তবে, কবিতা কি তা জানার চেষ্টায় আছি। 
     তাই নাকি?
     হ্যাঁ, জানেন -এই জানতে চাওয়ার ও একটি কাহিনী আছে।
     কি!
   “পত্রিকাতে কবিতাগুলো একটু দেখে দেন না কেন?” মন্তব্য।   এই অতীব প্রয়োজনীয় মন্তব্যের কারনে আমি  কবিতা লেখার নিয়মকানুন দেখতে আগ্রহী হই। বলতে পারেন এখন কবিতার প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস করছি।
     তা তো আপনার টাইমলাইনে দেখিতেছি!
     সবগুলোই দেখেন?
     হ, নারী এবং কবিতা! একটু পড়ে শোনাবেন?
     পাগল! আমি আবৃত্তি করি নাকি?
     তারপরেও। প্লিজ-

     শুনেন তাহলে-
মিলছে না- 
চুয়ান্ন। জীবনক্যালেন্ডারের হিসেবে 
মধ্যভাগের শেষ
হঠাৎ শখ হল পর্ব, উপপর্ব আর অতিপর্বের সাথে
প্রেম করবো!
তা কি সম্ভব?
সাদা আকাশের সাদা জোনাকির মত মেঘগুলো পাথর হয়ে
সেন্ট লোরেন্ট স্ট্রিট আর সাইডওয়াকের
সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে যখন নিমগ্ন
তখন পর্ব এবং রাস্তায় স্তুপিকৃত অপরূপা ব্রাউন পাথরের
মাঝে খুঁজে পাচ্ছি অপূর্ব এক মিল, এক সামঞ্জস্য
নারী এবং কবিতা!!
     থ্যাঙ্ক ইউ। খুব মজা করে শুনলাম।
     নো প্রবলেম। ইটস মাই প্লেজার। আসল কথা তো বলা হয়নি। 
     আসল কথা! বলেন-
     আপনাকে নিয়ে কবিতা লেখার চেষ্টা করেছি!
     হা হা, শোনান তো- 

তাকে ধন্যবাদ দিতে হয়
নিরানন্দময় জীবনে আনন্দের বন্যা
নিয়ে আসার জন্য।

মুক্তো আর হিরে। কত গল্প শুনেছি
কখনও মনে হয়নি
আজ বিকেলের পাগলকরা নিভু নিভু আলোর সাথে
পাল্লা দিয়ে
কাচেঘেরা দেয়াল ভেদ করে
অটোয়ার সাদা আকাশের ভেজা তুষারের
পুরোটাই বিদ্যুতের ঝিলিক হয়ে আমারই
টেবিলে মুক্তো আর হিরে হয়ে লুটিয়ে পড়বে তার হাসি !

     এই লাইনগুলো লিখেছিলাম সেদিন ডিনার করে আসার পরে। এখন যেটি পড়বো, সেটি লিখেছি সরাসরি আপনার জন্য। কিছু মনে করবেন না। লেখার খাতিরে লেখা, আর কিছু না।

পাওলা,
তোমাকে এক মজার খবর বলা হয়নি। আমি কবিতার মত কিছু
লিখতে শুরু করেছি ইদানিং,
তাই দেখে বন্ধুরা ভাবছে আমি প্রেমে পড়েছি।
তোমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে! তাই না?
কিন্তু সত্যি! আমি প্রেমে পড়েছি! কাল যখন
চাঁদের বন্যায় প্লাবিত বরফ বিছানো রিডো ক্যানেলের মসৃন
বুক ছিড়ে একমনে সামনের দিকে ছুটছি
তখন তোমার কথা
হারিয়ে যাওয়া জোনাকিঘেরা রাতের কথা খুব মনে পড়েছে।
একি হচ্ছে! পাওলা,
তোমাকে নিয়ে লেখা গল্পটা এখন ও
শেষ হল না
অথচ
তুমি ফিরে আসতে চাইছ নতুন ভাবে আমার কবিতার মাঝে
দেবী ভেনাসের মূর্তি হয়ে।
ইচ্ছা হচ্ছে আবার সেই উচ্ছ্বলা জীবনে ফিরে যেতে
যেখানে ছিপছিপে গড়নের
সদা মুক্তো ঝরানি গাঢ় বাদামী মেয়েটি দাঁড়িয়ে।
ইচ্ছা হয় মেহেদী রাঙ্গা দুটি হাত
আর আমার‍্যালোর গ্লাস নিয়ে খেলা করি।
কিন্তু তা কি সম্ভব?
সেই বয়স কি
আর আছে? তুমিই বল। ।
     হানিফ ভাই, চলেন নামিয়ে দেই। আপনি মরবেন - আমাকে ও মারবেন। 
     হ্যাঁ, চলেন । 

কবির চৌধুরী । অটোয়া, কানাডা