অটোয়া, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
শহীদ শেখ রাসেলের জন্মদিনে কানাডিয়ান বাংলাদেশিদের প্রত্যাশা – কবির চৌধুরী

ময়ের অভাবে অনেকদিন কিছু লেখা হয় না। আজকে লিখতে হচ্ছে- কারন আজকে লেখাটা আমার দায়িত্ব! বলা যায় গতকাল থেকেই তার শুরু- দুপুরের দিকে হঠাৎ করে পকেটে রাখা ফোন বেজে উঠে। ধরবো কি ধরবো না ভাবতেই দেখি পরিচিত নাম এবং নাম্বার। অনেকদিন পর- প্রায় তিন বছর পর ফোন এসেছে। অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে আমাদের সবার পরিচিত অপর্ণাদি ফোন করেছেন। ফোনটি ধরে, হ্যালো অপর্নাদি বলতেই ওপাশ থেকে পরিচিত কথাগুলো ভেসে এলো- কেমন আছেন কবির ভাই? অনেক দিন দেখা হয় না। কালকে শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে হাইকমিশনে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, তিনটার দিকে চলে আসবেন। আসবো বলে ফোন রেখে দেই। ফোন রেখে চিন্তা করছি, কি করবো? কাল সন্ধ্যে ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ যা কোন অবস্থাতেই বাদ দেওয়া যাবে না। কিন্তু অনুষ্ঠানে যাওয়াটাও যে দরকারী এবং নৈতিক দায়িত্ব। কানাডা, অটোয়া, শেখ রাসেল একটার সাথে যে আরেকটা অতপ্রোতভাবে জড়িত! 

আজ ১৮ অক্টোবর ২০২২ কানাডার রাজধানী অটোয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শহীদ শেখ রাসেলের ৫৯তম জন্মদিন উপলক্ষে “শেখ রাসেল দিবস” পালন করা হয়। উল্লেখ্য যে, ১৯৬৪ সালের ১৮ই অক্টোবর শেখ রাসেল জন্ম নেন এবং মাত্র ১০বছর ১০মাস বয়সে, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের সেই ভয়াল রাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা, শেখ জামাল, শেখ কামালসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কতিপয় সদস্যদের হাতে মর্মান্তিকভাবে শহীদ হন।

অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে শহীদ শেখ রাসেলের জন্মদিনের “শেখ রাসেল দিবস” অনুষ্ঠান এর আয়োজন, মহামারী কোভিড-১৯ পরবর্তী প্রথম অনুষ্ঠান। যদিও কানাডাতে সবকিছু স্বাভাবিক তারপরেও কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সাথে খুব স্বল্প পরিসরে দিনটি উদযাপনের উদ্যোগ নেয়। কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং দেওয়ান আইয়ূব হোসেন এর পরিচালনায় শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরুতেই দিনটি উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে প্রেরিত, মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণী পড়ে শোনান যথাক্রমে হাসান আল-বাশার আবুল উলায়ই এবং হোসেন মোহাম্মদ আল মুজাহিদ। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠের পরপরই অটোয়া এবং মন্ট্রিয়েল এর সুধীজনের অংশগ্রহণে “শেখ রাসেল দিবস”-এর তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধা এবং কানাডা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি মুহিবুর রহমানসহ অনেকেই। আলোচকবৃন্দ কানাডায় বসবাসকারী নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে সকল বাংলাদেশিদেরকে একযোগে চেষ্টা করার আহবান জানান। উল্লেখ্য যে, শিশু রাসেলকে হত্যাকারী নূর চৌধুরী কানাডার টরন্টো শহরে বাস করছে। এখানে কানাডায় নিযুক্ত হাইকমিশনার খলিলুর রহমান এর আলোচনার উল্লেখ খুবই প্রাসঙ্গিক ও দরকারী এবং আমার এই লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো জনাব রহমানের আলোচনার সারবস্তু কানাডায় বসবাসকারী বাংলাদেশি কানাডিয়ানদের সাথে শেয়ার করা এবং তাঁর বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করা। সভাপতির বক্তব্যে হাইকমিশনার রহমান বলেন, “কানাডা মানবাধিকারের দেশ, এখানে শিশু এবং মহিলাদের ব্যাপারে সরকার এবং জনগণ খুব সংবেদনশীল, আমরা যদি, বিশেষ করে আপনারা যারা এদেশের নাগরিক, তাঁরা যদি শেখ রাসেলের কথা, ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে নিহত মহিলাদের কথা, কানাডিয়ান সরকার এবং জনগণের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারেন এবং পারি, তাহলে নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত নেওয়া সম্ভব। আমার বিশ্বাস একদিন কানাডা সরকার নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে।“ আমি হাইকমিশনারের বক্তব্যের সাথে একমত। কানাডিয়ান জনগণ মানবতায় বিশ্বাসী এবং আমরা অভিবাসীরা তার প্রমান।  আমরা যদি খুব ভালভাবে, আন্তরিকভাবে, নেতাগীরী ও আমিত্ব বাদ দিয়ে কানাডা সরকার এবং জনগণের কাছে সেই নির্মম রাতের কথা, হত্যাকাণ্ডের কথা তুলে ধরতে পারি তাহলে একজন খুনির সাথে বসবাস করা থেকে মুক্তি পেতে পারি।   


এছাড়াও শেখ রাসেলকে নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি এবং বাংলাদেশ থেকে প্রেরিত দু’টি স্মৃতিচারণামূলক ভিডিও দেখানো হয়। শেখ রাসেলের জন্মদিনের কেক কাটার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। 

কবির চৌধুরী
সম্পাদক, আশ্রম
অটোয়া, কানাডা 
১৮/১০/২০২২