শহরের অন্তর্গত ক্ষয়িষ্ণু শরীরের ছায়ায়আমার একটি আকাশ ছিলোনীল চাদরে ঢাকা চাঁদের মায়ার মতোসাদাসাদা মেঘেরা ভাসতোএখানে এখন নেই কোনো হলুদ টিয়ার আনাগোনানেই কোনো লালনীল প্রজাপতির উড়ালতপ্ত কংক্রিটে ঢেকে গেছে কতশত নন্দনকাননবেনামি ফুলের বেনারসি পাপড়িগুলোশ্মশানের দহনে জ্বলে জ্বলে রুপোলী ছাই হয়েনিঃসঙ্গ নীলনীল ফড়িং এর ডানায় আজ উড়ছে।স্বপ্নহীন বেকুব পাখির ডানায় খেলেদিবসের শেষে পোড়ামাটির গন্ধদানবের পদাঘাতে থেঁতলে যাওয়া লাল ইটের শরীরভোরের নির্লজ্জ শিশির আজো ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরেহলুদ ঘাসের বুকে!পাখির চঞ্চুতে সন্ধ্যা লুকোয় শব্দহীনরুগ্ন গলির নগ্ন দেহে তখনও টুংটাং শব্দ খেলেকতগুলো অবাধ্য নেংটা পোলার হাতে'পুংটা' বাঁশির সুর!নাগবল্লরির মতো লতানো শরীরশাড়ির আঁচলে নারী ঝামটা মারে তার সূর্যমুখী বদনেআমার সেই চির চেনা নারী-চেনা গলির সোডিয়াম লাইটপোস্টের নিচে।এখানে সভ্যতার ক্রমবিকাশে নেতৃত্বে আছেকতিপয় ভণ্ড অবধূতস্বেচ্ছাচারী উঁচু উঁচু কংক্রিটের দালানফোসকা পড়া কুষ্ঠক্ষত থেকে অবিরাম লাশ হয়েঝরে পড়ে আমার পূর্বপুরুষের স্বপ্নের শহর!স্বপ্নচারী চপল চড়ুই, গোলাপি গলায়নুড়িপাথরের হাঁসুলিশহরের বহুমাত্রিক উদোম শরীরের নীলাভো ভাঁজেহিরণ্ময় রোদের বেপরোয়া বিচরণক্ষুধার মিছিলে বেগুনি চিল উৎচক্ষুতে শিকার খুঁজেক্লান্ত ডানার ছায়ায় ধরা পড়ে কয়েকটি মোরগের ছানা!গলির অদ্ভুত চোখের গ্রিলে বিষ্ঠার ডাস্টবিনসভ্যতা উঁকি মারে ভদ্রলোকের আস্তিনের ঝুলানো পকেটে ; আলো আর আঁধারের সাপলুডু খেলাবেশ্যার নিদ্রাহীন সভ্যতা ফেরিআভিজাত্যের রক্ত-নর্দমার জল!মসৃণ কার্পেটে নাদুসনুদুস কয়েকটি কুকুরের শয্যা!অদ্ভুত যত আরণ্যক বৈষম্যের মাদুলি গলায়লক্ষ্যহীন অসভ্য সভ্যতাচেনা শহরের বিক্ষত মানচিত্র হাতেআজ বিক্ষুব্ধ হত এবং লুপ্তলাল লাল ইটের ফাঁকে উদ্বিগ্ন মায়াবী শালিকের ঘরঝড়ের আগেই ঝরে-মরে যায় ভালোবাসার সাধ।কোনো একসময় মধ্যরাতের নিঃসীম আঁধার ভেদিয়ানবজাতকের কান্নাআর কয়েকটি বেওয়ারিশ কুকুরের প্রতিবাদী চিৎকারআমি দেখছি অনতিদূরে শহরের অতি ভদ্র পাড়ায়কোনো এক বন্য বরায় তুলেছে বহুতল ভবনবিলাসী সানসেটে পেঁচায় তুলেছে ঘরবস্ত্রহীন সভ্যতার উদলা শরীরে শিকারের খুঁজেখামচে ধরে বারবারএই মেদবহুল শহরে রকমারি কোলাহলঅগুনিত উজাল নক্ষত্রের ভিড়ে নর্দমার জেল্লা বাড়েআমার শহরে কাঙ্খিত সভ্যতার উন্মেষ ঘটে না!মুতাকাব্বির মাসুদ । শ্রীমঙ্গল, বাংলাদেশ
Ashram Bengali Magazine, Ottawa