অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
সরকারের যুগপূর্তি ও শেখ হাসিনার নেতৃত্ব

ড. মিল্টন বিশ্বাসঃ ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায় আসীন থাকার একযুগ পূর্তি। কারণ ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়ের পর এদিন শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশের সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ১৭ বছর পূর্ণ হলো। ২০২০ সালের করোনা কবলিত ‘মুজিববর্ষ’ ইতোমধ্যে ২০২১ সাল স্পর্শ করেছে। আবার স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বর্তমান সরকারের সামনে নানাবিধ চ্যালেজ্ঞ্জ এসে উপস্থিত হয়েছে। পদ্মা সেতু ও গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ কিংবা যোগাযোগ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত হলেও করোনার টিকা নিয়ে আছে মানুষের মনে অনেক সংশয়। স্বাস্থ্যখাতকে ২০২০ সালে যে সংকট মোকাবেলা করতে হয়েছে সরকারের নানাবিধ চেষ্টার পরও ভাল অবস্থায় উন্নীত করা যায় নি এ খাতকে। এখনও মানুষের পকেট থেকে টাকা উধাও হচ্ছে সেবা প্রাপ্তি ছাড়াই। আইনের শাসন এ সরকারের শত চেষ্টা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। বড় বড় প্রকল্পের স্বপ্ন আর নেতাদের বড় বড় কথার ফুলঝুরি মানুষকে বিরক্ত করে তুলেছে। মানুষ চায় স্বস্তি, নিরাপদে বাস করতে, টাকা ব্যয় হলে তার বিনিময়ে চায় সেবা। গত একযুগে কেবল ঢাকা শহরের সড়কগুলো নিরাপদ হয়নি, সেখানে বাজার ও হকারদের উপদ্রব। হাঁটার জন্য সড়কের নির্দিষ্ট জায়গাও দখলে। এ শহরের সবই দখলে চলে যাচ্ছে, দেখার কেউ নেই। তাহলে যুগপূর্তির গুরুত্ব কি? নির্বাচনী ইশতেহার অনুসারে কি সরকার কাজ করছে? নেতৃত্ব কতটা গ্রহণযোগ্য এখনও?    

২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ইশতেহার সম্পর্কে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আগামী নির্বাচনের জন্য তো ডেল্টা প্ল্যান দিয়ে দিলাম। ৮১ বছরের প্ল্যান দিয়ে দিয়েছি। পরবর্তী শতাব্দীতে, মানে ২১০০ সালে কি রকম বাংলাদেশ হবে সেই পরিকল্পনাও দিয়ে দিয়েছি।’ এটা সত্য বাংলাদেশের চেহারা উন্নয়নের ছোঁয়ায় পাল্টে যাবে। কিন্তু মানুষের আচরণ আদৌ বদল হবে কিনা সন্দেহ আছে। একযুগে এদেশ পাল্টে গেছে অনেকক্ষেত্রে কিন্তু মানুষের সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটেনি।তবে আমাদের মনে আছে,‘দিনবদলের সনদ’ নামে ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের প্রতিশ্রুতি ছিল আওয়ামী লীগের। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের স্লোগান ছিল ‘শান্তি গণতন্ত্র উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। সেই ইশতেহারে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার ঘোষণা দিয়েছিল দলটি। গত ১০ বছরে এই দুই ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুত ছিল সেগুলোই ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতির পর এখন লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ। 

ক্ষমতা ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকে গুরুত্ব দিয়ে ২০১৮ সালে ইশতেহার তৈরির কাজ করেছিল দলটি। তাতে ছিল ৮১ বছরের অর্থাৎ ২০১৯ সাল থেকে ২১০০ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা। এ ছাড়া ইশতেহারে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ এবং মাদক নির্মূলের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছিল। দ্বিতীয় পদ্মা ও যমুনা সেতু, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয় ছিল ইশতেহারে। দেশের প্রবৃদ্ধি যেন দুই অঙ্কে পৌঁছায় সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের ঘোষণাও ছিল ইশতেহারে। দেশের প্রতিটি মানুষের সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার যেন রক্ষা হয় সে বিষয়টিও ইশতেহারে জোরালোভাবে বিবৃত হয়। পাশাপাশি ইশতেহারে সরকার এবং রাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য অর্জন যেমন— যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, কৃষি ও শিক্ষায় উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে অগ্রগতি, কর্মসংস্থান, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, ১০০টি অর্থনৈতিক জোন, নারী উন্নয়ন ও নারী নীতি বাস্তবায়নের বিষয়গুলোর উল্লেখ ছিল। দুর্নীতি রোধে গৃহীত পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত বিষয়গুলো অগ্রগতি বিবেচনায় নিয়ে তখনকার ইশতেহারে প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজন আনা হয়েছে। দেশের সম্ভাবনাময় অঞ্চলগুলো থেকে মানুষের চাহিদা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে সে সবের আলোকেই তৈরি হয়েছিল সেবারের ইশতেহার। বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম উন্নয়নের সুযোগ সুবিধা আছে। সে সুযোগ সুবিধাগুলোকে সরকারকে কাজে লাগাতে হবে। বিভাগগুলোর বিভিন্ন জেলায় যারা ব্যবসা এবং শিল্পের নেতৃত্ব দেন তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল। সাধারণ ভোটারদের আকৃষ্ট করা এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য তখন বড় বড় প্রতিশ্রুতির কথা শোনানো হয়েছিল নির্বাচনী ইশতেহারে। ২০১৮ সালে শেখ হাসিনা ‘দিন বদলের সনদ রূপকল্প-২০২১’ উপস্থাপন করেছিলেন। আর জনগণ নিরঙ্কুশভাবে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করে। তারপরে গত দু’বছরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে(চতুর্থবারের মতো)শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা, দৃঢ়তা, সাহসিকতা, সততা ও কর্মনিষ্ঠা আরো বেশি বিশ্ব নন্দিত। তাঁর নেতৃত্বের সফলতা বিশ্বে অন্যান্য নেতাদের আদর্শে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা ক্ষমতার টানা এই এক যুগে দেশের উন্নয়নে যা করেছেন তা অতুলনীয়। অবশ্য জনবহুল এদেশের সকল সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হননি। যদিও অর্থনীতি ও আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার সকল দেশকে ছাড়িয়ে সারাবিশ্বে অগ্রগতির অভূতপূর্ব স্মারক বহন করছে বাংলাদেশ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর এদেশের মানুষের এগিয়ে যাওয়ার সকল উদ্যম রহিত হয়, মানসিকভাবে হতোদ্যম এদেশবাসী ২১ বছর সামরিক শাসকদের যাঁতাকলে পিষ্ঠ হতে থাকে। কীভাবে প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করে সামনে যেতে হবে, কীভাবে বিশ্বের দরবারে নিজেদের অধিকারের কথা বলতে হবে, কীভাবে দেশবাসীকে স্বপ্ন দেখাতে হবে তার সবই সেসময় নির্বাসিত, অন্তর্হিত, যেন প্রভাতে প্রদীপের সলতে পাকানোর কোনো লোক নেই, সন্ধ্যায় আলোক প্রাপ্তি তো দূরের কথা! তারপর এলো ১৯৯৬ সাল; প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা বাঙালির অহংকার হয়ে উঠলেন, জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি নিয়ে তিনি মানুষের সামনে দাঁড়ালেন। দেশের রাজনীতিতে সমাজ সংস্কার আর অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়ে উঠল মূলমন্ত্র; বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মঙ্গল চিন্তায় ব্যাপিত হলেন। ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত ‘বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য উন্নয়ন’ গ্রন্থের নাম প্রবন্ধে তিনি লিখলেন, ‘আমাদের দেশের জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য কর্মসূচি প্রয়োজন। আর্থ-সামাজিক কর্মসূচিকে আরও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। রাজনীতির উদ্দেশ্য হচ্ছে রাষ্ট্রের নাগরিকদের সুখ-সুবিধা নিশ্চিত করা, শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা, সুস্থ সবল জাতি গঠন করা। রাজনীতি হতে হবে ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে। দেশকে আমরা কী দিতে পারলাম সেটাই একজন রাজনীতিবিদের চিন্তা-ভাবনা হতে হবে। দেশ কী দিল তা বড় কথা নয়। দেশের জন্য, মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম সেটাই বড় কথা। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে জনকল্যাণমুখী কর্মসূচি নিয়ে। আজকের প্রতিযোগিতা হতে হবে অর্থনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে। সামাজিক কর্মসূচি নিয়ে।’ (রচনাসমগ্র ১, পৃ ২১৩) 

এই উদ্ধৃতির সূত্র ধরে বলতে হয়, শেখ হাসিনার সৎ, বলিষ্ঠ এবং দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই আজ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। তিনি টাইম ম্যাগাজিনের বিবেচনায় বিশ্বের প্রভাবশালী দশ নারী নেত্রীর একজন মনোনীত হয়েছেন। অভ্যন্তরীণ জনপ্রিয়তার দিক থেকেও শেখ হাসিনার সমকক্ষ হিসেবে কাউকে চিন্তা করার কোনো অবকাশ নেই। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউট-এর জরিপে দেখা যায় যে ৭৭.৭ শতাংশ বিশ্বাস করে বাংলাদেশ সঠিক নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে, যা ২০১৫ সালে ছিলো ৬২ শতাংশ। এ থেকেই প্রতীয়মান হয় যে তখন থেকে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা দিন দিন অপ্রতিরুদ্ধভাবে বেড়েই চলেছে। এমন নেতৃত্বের কারণেই ২০১৮ সালের মে মাসে মহাকাশে বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রযুক্তিগতভাবে তার অগ্রসরতা জানান দিয়েছে। সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ দেশের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সুসংহত করার পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশ গত ১২ বছরে ‘উন্নয়নের মহাসড়কে’ যে পথ পাড়ি দিয়েছে, তাকে ‘অসাধ্য সাধন’বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমি জানি না, পৃথিবীতে কোনো দেশ এত অল্প সময়ে এত উন্নতি সাধন করতে পারে কিনা। কিন্তু আমরা সেই অসাধ্য সাধন করতে পেরেছি।’প্রকৃতপক্ষে গত এক যুগে জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন এবং দিনবদলের যাত্রা শুরু হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাবার মতো আমাকে যদি জীবন উৎসর্গ করতে হয়, আমি তা করতে প্রস্তুত।’ ধৈর্য ও সাহসের প্রতিমূর্তি শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের মানসকন্যা, দেশরত্ন, কৃষকরত্ন, জননেত্রী- বহুমাত্রিক জ্যোতিষ্ক। তাঁকে কেন্দ্র করে, তাঁর নেতৃত্বে আবর্তিত হচ্ছে বাংলাদেশ। তিনি অন্য রাজনীতিবিদদের চেয়ে প্রকৃতপক্ষে আলাদা, ভিন্ন, স্বতন্ত্র ও নেতৃত্বের গৌরবজনক আসনে সমাসীন। তিনি জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী অর্থনৈতিক বিকাশ ত্বরান্বিত করেছেন; জাতীয় সংকট উত্তরণে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। তিনি জনতার আকাঙ্ক্ষাসমূহ এবং টিকে থাকার বাস্তবতার মধ্যে সেতু বন্ধনের সাহায্যে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে এনেছেন। তাঁর নেতৃত্বের সাফল্যে বাংলাদেশ আজ গৌরবজনক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। 

বর্তমান প্রজন্মের কাছে শেখ হাসিনা এক সাহসী রাজনীতিকের নাম; যাঁর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় ভবিষ্যতের বাংলাদেশ উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে চলেছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি পাল্টে গেছে; ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার রায় ঘোষিত হয়েছে (১০ অক্টোবর, ২০১৮), এর আগে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, জেল হত্যাকাণ্ড ও বিডিআর সদস্য কর্তৃক সেনাসদস্যদের হত্যার বিচারসহ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তরুণ প্রজন্ম প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি-জামায়াতকে। বিএনপি-জামায়াতের সহিংস বীভৎসতাকে। ২০২০ সালে যানবাহনে আগুন দেওয়া আর অতীতে সহিংসতা, জ্বালাও-পোড়াও আর পেট্রলবোমায় মানুষ হত্যা করে তারা উল্টো পথে চালাতে পারেনি আইনের শাসন। অপরাধ দমনে কঠোর হওয়ায় দমে গেছে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতের রাজনৈতিক তৎপরতা। শুধু অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নয়, কূটনীতিক দিক থেকেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন। তিনি মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে সব বিরূপ পরিস্থিতিকে নিজের অনুকূলে নিয়ে এসেছেন। গত ১২ বছরে তাঁর মন্ত্রিসভায় যুক্ত হয়েছেন অভিজ্ঞ ও বর্ষীয়ান রাজনীতিক। কিছু বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা সত্ত্বেও উন্নয়ন সহযোগী ও অংশীদার বানিয়ে ফেলেছেন রাশিয়াসহ অন্য অনেক দেশকে। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধুত্বের বন্ধন আরো সুদৃঢ় হয়েছে। তাঁর সরকারের উন্নয়নের মডেল অন্যান্য দেশের কাছে প্রশংসিত হচ্ছে। 

বঙ্গবন্ধু আজীবন সংগ্রাম করে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে অনন্য মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন; সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছেন ও বাস্তবায়নে অগ্রসর হয়েছেন; তাঁর সেই আদর্শিক ধারায় স্নাত হয়ে শেখ হাসিনা মেধা ও দূরদর্শিতাসম্পন্ন রাজনীতিক হিসেবে জনগণের ভাগ্য বদলে দিয়েছেন। জননেত্রীর নেতৃত্বে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের অগ্রগতি অসামান্য। শেখ হাসিনা তাঁর নিজের কাজে প্রমাণ করেছেন যে, রাজনীতির অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশ ও জনগণের ভাগ্য-উন্নয়ন। 

আমরা এখন অদম্য বাংলাদেশের বাসিন্দা। যে দেশের প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হচ্ছেন, যে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, দীর্ঘতম পদ্মাসেতু যার গৌরবে পরিণত হতে যাচ্ছে, দেশের তৈরি পোশাক বিদেশিদের গায়ে পরিধেয় বস্ত্র হচ্ছে, বিশ্ব দরবারের প্রথম কাতারে ব্যবসায়-বাণিজ্য, গবেষণা, ক্রীড়া সব ক্ষেত্রে অগ্রণি হয়ে উঠেছে। ধর্মীয় উগ্রবাদিতা আর ধর্মীয় সন্ত্রাস আমাদের মনোবলকে ধ্বংস করতে পারেনি। নেতিবাচক কোনো অভিঘাতই অদম্য বাংলাদেশের মেরুদণ্ডকে বাঁকা করতে পারছে না। এখন দরকার সহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ এবং স্বাধীনতার পক্ষের চেতনার সরকার ও বিরোধী দল। ‘আমরা উন্নয়নের যে মহাসড়কে যাত্রা শুরু করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি, সেখান থেকে আর পিছনে ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই। বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্ম সমৃদ্ধি ও প্রগতির পথে সকল বাধা দূর করার দায়িত্ব গ্রহণ করবে।’

বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের প্রতি তাঁর এই অভিব্যক্তি জনকল্যাণমুখী উন্নয়ন নীতিমালার অনন্য কথামালা।যাঁরা জনগণের উন্নয়নের রাজনীতি করেন- জনগণ তাঁদের পাশে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। গত ১২ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়েছেন, তাঁর প্রতি আমাদের নিঃশর্ত নির্ভরতা।জয়তু শেখ হাসিনা।

(লেখক: ড. মিল্টন বিশ্বাস, বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, email-drmiltonbiswas1971@gmail.com)