অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
শাহ বাহাউদ্দীন: আমাদের পরবর্তী প্রতিনিধি - সুপ্তা বড়ুয়া

প্রত্যেক মানুষই স্বতন্ত্র। মানুষের ব্যক্তিত্ব আর জীবন নির্ভর করে তার বেড়ে ওঠা, শিক্ষা, পরিবার, পরিবেশর উপর। আমরা সেই মানুষটা হয়েই বেড়ে উঠি পরিবার এবং সমাজ আমাদের যেটা করতে অনুপ্রানিত করে, যা দেখতে পাই আমাদের চারপাশে। পারিপার্শ্বিক জীবন, শিক্ষা এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও আমাদের জীবনকে একটা সুশৃঙ্খল আকৃতি দান করে। একটি সমৃদ্ধ পারিবারিক পরিমন্ডলে বেড়ে উঠলে পরিবারের প্রভাবে  মানুষ অনুপ্রেরণা পায় সামাজিক সেবামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার। অটোয়া বাংলাদেশী কমিউনিটির, শাহ বাহাউদ্দীনও সেই পরিবারিক পরিমন্ডলে বেড়ে উঠেছেন বলেই সামাজিক সেবামূলক কর্মকাণ্ড যেন তার রক্তে মিশে আছে। সেই মানুষটিকে নিয়ে আমি লিখতে বসে কোথায় শুরু করবো, সেটা চিন্তা করতে করতেই যেন সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। আমার এই ক্ষুদ্র লেখনীর মাধ্যমে শাহ বাহাউদ্দীনের মতো বর্ণিল কর্মময় জীবনের অধিকারীকে নতুন করে বাঙালি কমিউনিটিতে পরিচয় করিয়ে দেওয়া সত্যি দুঃসাধ্য। বরং উনার কাজ, ব্যবহার, এবং সামাজিক নানা সমস্যায় তার অকৃত্রিম, নিরলস সম্পৃক্ততার কারণে বাঙালী কমিউনিটি তথা সমগ্র অটোয়ায় এক নামে, শাহ বাহাউদ্দিন’কে, সবাই চিনে। সরকারী চাকুরে বাবা, মোহাম্মদ শফি উদ্দিন, বিভিন্ন জেলায় কর্মরত থাকায় বেড়ে উঠেছেন নানা শহরে। মা, হাসিনা বেগম, গৃহিণী হলেও ছিলেন শিক্ষানুরাগী। পিতামহ, সিরাজ উদ্দীন সরকার মাত্র ৩৩ বছরের জীবনে, তাদের গ্রামে প্রথম প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নির্মাণ করেন সম্পূর্ণ নিজ খরচে। সেই পারিবারিক ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে শাহ বাহাউদ্দীনের বাবা-মায়ে’র নিরলস প্রচেষ্টায় গ্রামে প্রথম বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, কলেজ, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ বহুবিধ সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে তাদের পরিবার।

ঢাকা নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর চলে যান রাশিয়া’র ভ্লাদিমির স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সের উপর ডিগ্রী নিতে ১৯৯২ সালে। সেখানকার পাঠ চুকিয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালেই কানাডা ইমিগ্রেশনের জন্য এপ্লাই করেন এবং ২০০০ সালে অটোয়া, কানাডাতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ২০০৬-২০০৮ সালে অটোয়া ইউনিভার্সিটি থেকে Engineering Management-এর উপর মাস্টার্স করেন। তারপর স্বল্প সময়ের জন্য একটি সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত থাকলেও রিয়েল এস্টেটে তার আগ্রহ তৈরি হয় মূলত সেই কাজ করতে গিয়েই। কানাডা আসার পর থেকেই লিভারেলের কার্যক্রমের প্রতি বেশ আগ্রহী ছিলেন তিনি। ২০১৩-২০১৪ সাল থেকে সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেন এই দলটির সাথে। বৈচিত্র্যময় কর্মজীবনে, শাহ বাহাউদ্দীন গত ৬ বছর ব্যাপী, প্রথমে নিপিয়েন-কার্লটন এবং তারপর কার্লটন, রাইডিং-এ লিবারেলের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর হিসেবে কাজের মাধ্যমে জনগণকে সেবাপ্রদান করছেন।
 শাহ বাহাউদ্দীন শিশির  এবং নাসরিন শশী
সদা হাসিখুশি আর প্রাণশক্তিতে ভরপুর শাহ বাহাউদ্দীন কানাডা সম্পর্কে তার বক্তব্যটি তুলে ধরেন এভাবে, “আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান যে একটি সুন্দর দেশে বসবাস করি। এখানকার সিস্টেম অত্যন্ত সুন্দর এবং সাজানো। তবে সময় এবং চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের আরো এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে প্রচুর। বিজ্ঞানের নিত্যনতুন আবিষ্কার, মানুষের নানাবিধ চাহিদার পরিবর্তন কিংবা নতুন প্রজন্মের প্রয়োজনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের উন্নতি করার ক্ষেত্রও অনেক বিস্তৃত”। পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য সরকারের নীতিমালাকে আমলে রেখে এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে শাহ বাহাউদ্দীন অন্টারিওকে নিয়ে তার স্বপ্নের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। যে পরিকল্পনার মূলে রয়েছে পরিবার। তিনি মনে করেন, পরিবারের শুরুটাই শিক্ষার মাধ্যমে। তাই আমাদের মূল লক্ষ্য হলো একটা স্বনির্ভর এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা এবং তার জন্য শিক্ষার বিকল্প কিছু আছে বলে তিনি মনে করেন না। Confucius-এর বিখ্যাত উদ্ধৃতি’র কথা স্মরণ করিয়ে দেন তিনি, “If your plan is for 1 year, plant rice; if your plan is for 10 years, plant trees; And if your plan is for 100 years, educate children”। আর শিক্ষাব্যবস্থায় অবদান রাখতে হলে সেটা রাজনীতির মাধ্যমে সিস্টেমেটিক পরিবর্তন ছাড়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন শাহ বাহাউদ্দীন। অন্টারিওতে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঝরে পড়ার হার, গড়পড়তা ৫-১৪% এবং নিম্নবিত্ত পরিবারে যেটা প্রায় ৫০%-এর কাছাকাছি, নিয়ে তার কন্ঠে হতাশা ফুটে ওঠে। কানাডার মতো উন্নত দেশে এই হারটা খুবই হতাশাব্যাঞ্জক। সেকারণে এই হার কমাতে তার কাছে রয়েছে এক সুন্দর প্রস্তাবনা, তেমনি বিশেষ শিশুদের নিয়ে যেসব বাবা-মা প্রতিনিয়ত  যুদ্ধ করে যাচ্ছেন তাদের জন্য রয়েছে আরো যুগোপযোগী এবং প্রযুক্তি নির্ভর সমাধান। বাদ যায় নি, আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের জন্য কাজ করে যাওয়ার প্রয়াসও। তিনি মনে করেন, ‘পরিবারগুলোক যদি ভালো রাখা যায়, তবে বেশিরভাগ সমস্যারই সমাধান রয়েছে আমাদের হাতের নাগালে। তাই কিভাবে প্রতিটি পরিবারের জীবনযাত্রার মান-উন্নয়ন করা যায় সেটাই হওয়া উচিত সব রাজনীতিবিদদের মূল লক্ষ্য’। আমরা যারা অটোয়া বাঙালী কমিউনিটিতে আছি, তারা ইতিমধ্যেই জানি তার কাজের ধরণ। এবং তার কারণেই আমরা জানি, অত্যন্ত বিনয়ী এই মানুষটি কি নিরলসভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন সকল বর্ণ-জাতি-ধর্মের মানুষকে। এসব কথার মাঝে তিনি বারবার মনে করতে ভুল করেন না, কানাডিয়ান সমাজের কাছে তিনি ভীষণভাবে ঋণী এমন একটি সুন্দর এবং নিরবিচ্ছিন্ন জীবনের জন্য। সেই ঋণের ভার কিছুটা কমানোর জন্য তিনি মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চান এবং রাজনীতির মাধ্যমে সে কাজটা করা অনেক বেশি ফলপ্রসূ বলে তিনি মনে করেন।  তবে পাশাপাশি তিনি এও মনে করতে ভুল করেন না, প্রত্যেকটা মানুষ কিভাবে তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজ নিজ কাজের দ্বারা এ সমাজ বিনির্মানে ভূমিকা রেখে চলেছে। বাঙালী নতুন প্রজন্মকেও তার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা আরো বেশি রাজনৈতিক সচেতন করে তুলতে সাহায্য করবে বলে আশাবাদী। আমাদের আরো বেশি রাজনীতিতে সংযুক্তি প্রয়োজন বলেও মনে করেন, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের। কেননা, “নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা অনেক মেধাবী, বুদ্ধিমান, এবং তারা এই সমাজ এবং জাতিকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করতে পারে” বলে বিশ্বাস করেন শাহ বাহাউদ্দীন। কানাডা একটি বহুজাতিস্বত্তার দেশ, রাজনীতিতেও বহুজাতিক বৈচিত্র্য অবশ্যম্ভাবী। নিপিয়েন রাইডিং-এ রয়েছে বহুজাতিস্বত্তার মানুষের  সহাবস্থান এবং এটাই কানাডার সৌন্দর্য। সব জাতির মানুষের জন্য আন্তরিকতার সাথে মেধা, শ্রম দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে চান মনোনয়নপ্রত্যাশী শাহ বাহাউদ্দীন। 
  স্ত্রী নাসরিন শশী এবং ছেলে রায়েন এর সাথে শাহ বাহাউদ্দীন
বর্তমান সময়ে আমাদের নতুন প্রজন্ম পরিবেশ নিয়ে আরো বেশি সচেতন এবং পরিবেশের ক্ষতি করে কোন উন্নয়নই যে টেকসই নয়, তা তারা বেশ ভালো করেই উপলব্ধি করতে পারছে। শাহ বাহাউদ্দীনও মনে করে পরিবেশ বিষয়ে আমাদের বিনিয়োগটা হওয়া উচিত আমাদেরই সুবিধার্থে যাকে তিনি এক কথায় “Wise Investment” বলে সংজ্ঞায়িত করেন। পরিবেশকে আমলে না নিয়ে যেকোন উন্নয়নই যে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকিস্বরূপ সে কথা দ্ব্যর্থ কন্ঠে স্বীকার করেন তিনি। আমাদের উন্নয়নের রূপরেখা থেকে পরিবেশ যেন কোনমতেই বাদ না যায়, তা আমাদের কাজের মাধ্যমেই প্রমাণ করতে হবে।

প্রাদেশিক সরকারের নিকট শাহ বাহাউদ্দীনের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রস্তাবনা এখানে সংক্ষিপ্তাকারে উল্লেখ করা হলোঃ
•শিক্ষাব্যবস্থার ঝরে পড়া রোধ।
•বিশেষ শিশুদের এবং তাদের পরিবারদের প্রয়োজনীয়তা বুঝে সুযোগ প্রদান।
•নতুন প্রজন্মের জন্য আরো বেশি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র তৈরি, বেকারত্বের হার হ্রাস।
•বয়োবৃদ্ধদের প্রয়োজনীয়তা এবং সমস্যা সমাধান।
•বয়োবৃদ্ধদের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী সেবাপ্রদান কেন্দ্রগুলোতে পরিসেবা বৃদ্ধি।
•পরিবেশবান্ধব টেকসই উন্নয়ন এবং পরিবেশ সংরক্ষণ।
•নতুন অভিবাসীদের কানাডিয়ান সমাজে অন্তর্ভুক্তি সহজ এবং মসৃণ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ। 
•বাসস্থান সমস্যা সমাধানে নানামুখী সুবিধা বৃদ্ধি।
•নিপিয়েন এলাকায় রাস্তা, ব্রিজ, স্কুল, লাইব্রেরি, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানমূলক প্রতিষ্ঠানসহ নানামুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখা।

নিপিয়েন-এ (Nepean Riding) প্রায় ৯০০০০ ভোটার আছেন। এখানে নিপিয়েন রাইডিং-এর ম্যাপ দেওয়া হলোঃ  সকল জাতি-বর্ণের মানুষকে লিবারেল পার্টির সদস্যপদ গ্রহণ করে শাহ বাহাউদ্দীনকে মনোনয়নের জন্য বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। যে কেউ, ১৪ বছর বয়সের অধিক অত্র এলাকায় বসবাসকারী নাগরিক/পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট/আন্তর্জাতিক ছাত্ররাও, মনোনয়ন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন। তবে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রথমে লিবারেলের সদস্যপদ লাভ করতে হবে। এইখানে সদস্য হওয়ার জন্য আবেদনপত্র সংযুক্ত করা হলো (https://ontarioliberal.ca/become-a-member/)।

বর্তমানে Director of Carleton Provincial Liberal Association হিসেবে নিযুক্ত থাকার পাশাপাশি বহুবিধ কাজের সাথে যুক্ত রয়েছেন শাহ বাহাউদ্দীন। কানাডা BACAOV এর সভাপতি আছেন ২০১৮ থেকে। Hans Radio-তে প্রথম বাংলা ভাষায় অনুষ্ঠান চালু করেন ‘কথা-সুর’ নামে, যার সহ-উপস্থাপকও তিনি। তার সহধর্মিণী, নাসরিন শশী’র, সহযোগিতায় নির্মাণ করেছেন ‘ঊষা মিউজিক স্কুল'। ২০২০ সালে সিটি হলের অধীনে ঘোষণা করেন Heritage Weeks নামে মাল্টিকালচারাল সপ্তাহ। যুক্ত আছেন Mother Language Lovers of the World Society-এর সাথে। শাহ বাহাউদ্দীন’এর সহধর্মিণী নাসরিন শশী কানাডা সরকারের প্রযুক্তি সহায়ক হিসেবে কাজ করছেন এবং অত্যন্ত পরিচিত সংগীত শিল্পী অটোয়ার দক্ষিণ এশিয়া কমিউনিটিতে। শাহ বাহাউদ্দীন এবং নাসরিন শশীর একমাত্র ছেলে রায়েন শাহ'কে নিয়ে বর্তমান কানাডার রাজধানীতে তাদের বসবাস।

অত্যন্ত পরিশ্রমী, বিনয়ী, সৎ শাহ বাহাউদ্দীনকে প্রাথমিক মনোনয়নের মাধ্যমে কানাডার প্রাদেশিক সংসদে বাঙালী তথা সমগ্র নিপিয়েন রাইডিং -এর প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন করতে সকলকে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি। “কানাডাতে রাজনীতি করা মানে নেতৃত্ব প্রদান নয়, এখানে রাজনীতি মানে মানুষের সেবা করা” এই মূলমন্ত্রে বিশ্বাসী শাহ বাহাউদ্দীনকে আমাদের সকলের স্বার্থেই প্রাদেশিক সংসদে আমাদের প্রতিনিধি হিসেবে পাঠানোর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। নিপিয়েন-এ বসবাসকারী সকলের সহযোগিতায় শাহ বাহাউদ্দীনের অন্টারিও প্রাদেশিক সংসদে নির্বাচিত হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করছি। শাহ বাহাউদ্দীন সম্পর্কে নিচের লিঙ্কটিতে গিয়ে আরো বিস্তারিত জানতে পারেন: https://www.shahfornepean.ca/। 

সুপ্তা বড়ুয়া। অটোয়া