রম্য রচনা – চিরঞ্জীব সরকার
শৃগাল ও শাখামৃগ সংবাদ
এককবার এক হঠাৎ বন্যার কবলে পড়ে যায় সমতলের আখের ক্ষেতের গর্তে ঘর বানিয়ে থাকা এক শৃগাল পরিবার। চারদিকে শুধু অথৈ পানি থৈ থৈ করছে। কোথায় আশ্রয় নিবে তারা বুঝতে পারছে না। শৃগাল পরিবারটি পরিসরে মোটামুটি একটা শহুরে আধুনিক মধ্যবিত্ত পরিবারের মত। স্বামী-স্ত্রী ও দুটি বাচ্চা।স্বামী ও স্ত্রী শৃগালটি আলোচনা করে সিদ্বান্ত নিল যে করেই হোক ডাঙ্গায় উঠতেই হবে, তা না হলে তো পরিবারের সবার ভাগ্যে নিশ্চিতরূপেই সলীল সমাধি ঘটবে। কিন্তু দিগন্তেও কোন ডাঙ্গার দেখা মিলছে না। তবুও প্রান বাঁচাতে তারা সাঁতার শুরু করল অনেকটা ভাগ্যের উপর নিজেদের সপে দিয়ে। অনেকদূর সাঁতারের পর ভাগ্য মনে হয় তাঁদের সুপ্রসন্ন হল। অপেক্ষাকৃত একটা পাহাড়ী উঁচু জায়গা তাঁরা দেখতে পেল যেটি সবুজ বন-বনানীতে পরিপূর্ন। ভিতরে ভিতরে তাঁরা স্বস্তি অনুভব করতে লাগল তাহলে এবার বুঝি প্রানটা কোনমতে বেঁচে গেল। তারা যখন এ উঁচু জায়গাটায় পৌঁছল তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেলেরও খানিকটা পেরিয়ে গেছে। দীর্ঘ সময় সাঁতার কাটা ও খাদ্যহীন থাকায় চার সদস্যের শৃগাল পরিবারটি জঙ্গলের এক কোনায় তখন শ্রান্তিতে কোনমতে অবসন্ন গা এলিয়ে দিল।
এদিকে এ জঙ্গলে থাকত একটি বাঘের পরিবার। বন্যার কারনে তারাও আর কিছুদিন যাবত সমতলে শিকারে যেতে পারছে না। তাদের পরিবারেরও খাদ্য সঙ্কট ঘনীভূত হল। বাঘটির পরিবার আবার চীনের পূর্বেকার এক সন্তান নীতি অনুসরন করে কেবলমাত্র একটি ব্যঘ্র শাবক এ ধরাধামে এনেছে। কিন্তু বন্যা নামক এ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কবলে পড়ে নিজেদের কথা তো দূরে থাকুক একমাত্র সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে পারছিল না এ ব্যঘ্র দম্পতি কিছুদিন যাবত। এ অবস্থা যখন চলছিল তখন স্ত্রী বাঘটির কথা নামক ঘ্যাতানির চোট সহ্য করতে না পেরে অবশেষে পুরুষ বাঘটি ক্লান্ত দেহে পাহাড়টির এদিক ওদিক হাঁটতে লাগল যদি ভাগ্যক্রমে কোন শিকার জুটে। প্রব্যাবিলিটি থিওরী অনুসারে এহেন পরিস্থিতিতে যদিও এখানে এখন কোন শিকার পাবার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীন কিন্তু তবুও সবকিছুরই তো কোন না কোন একটা ব্যতিক্রম থাকে। এ চিন্তায় পুরুষ বাঘটি বুকে আশা সঞ্চার করে ভালভাবে পাহাড়টার চারদিক পর্যবেক্ষন করতে লাগল যদি কোন শিকার মেলে। অবশেষে পাহাড়ের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে এক শৃগাল পরিবারকে দেখে তার অন্তরে এক অনাবিল খুশির ঝিলিক বয়ে গেল। তাহলে বেশ কিছুদিন পর ‘র ফক্স মিট’ দিয়ে একটা বারবিকিউ ফিস্ট উদযাপন করা যাবে।
ক্লান্তি শেষে ঘুম থেকে উঠে শিয়াল দম্পতি যেইনা চোখ তুলে তাঁকাল অমনি অদূরে মৃত্যুদূত ব্যঘ্র মহাশয়কে দেখে তাদের পিলে চমকে গেল। শরীরে কোন শক্তি নেই। ডি-ট্যুর করে আখক্ষেতের বাসায় প্রত্যাবর্তনেরও কোন উপায় নেই। শরীরে একটু বল থাকলে হয়ত বাঘের কবল থেকে রক্ষা পাবার জন্য পাহাড়টার কিছুটা এদিক ওদিকে ব্যর্থ ছোটাছুটি করা যেত। ওদের খারাপ লাগছে সন্তানদুটির জন্য। পৃথিবীর আলো-বাতাসের সাথে এখনো ভালভাবে ওদের পরিচিতি হয়নি কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস এখন সপরিবারে বাঘের পাকস্থলীতে প্রবেশ করে সেখান থেকে নিঃসৃত স্ট্রং হাইড্রোক্লোরিক এসিড দ্বারা গলে এখন হজম হতে হবে। স্বামীকে বিষন্নতায় কাতর দেখে শিয়ালের ভার্যা শক্তি ও সাহস জোগাতে বলল, ‘আমাদেরকে তো সবাই বুদ্ধির কারনে পণ্ডিত বলে। বুদ্ধির খেলায় অবশ্যই আমরা দুষ্ট বাঘকে পরাস্ত করে আমাদের জীবন রক্ষা করতে পারব, আমার এ দৃঢ় প্রত্যয় রয়েছে’। বুদ্ধিমতী স্ত্রীর কথা শুনে স্বামী শিয়ালটি বলল, ‘বিশেষ বিশেষ সময়ে পাণ্ডিত্য কোন কাজে লাগে না প্রিয়ে। আকাশে উড়োজাহাজ যখন এয়ার পকেটে পড়ে বাম্পিং-এর শিকার হয় তখন সেখানে হার্বাড, এমআইটি অথবা ইয়েল থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করা স্কলার কোন যাত্রী সে বাম্পিং কি বন্ধ করতে পারে। স্ত্রী শিয়ালটি স্বামীর একথা শুনে হতাশায় নিমজ্জিত না হয়ে তার নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করতে বললল। বেচারা স্বামী শিয়ালটি শুধু আস্তে বলল,’জি ম্যাডাম’।
স্ত্রী বল্ল ‘আমার বাচ্চাদুটির শরীরে তোমার পায়ের নখ দিয়ে আঁচর কাট। হেড-কোয়ার্টাস থেকে নির্দেশ পাওয়া মাত্র স্বামী শৃগাল তা তামিল করে দিল। নখের খোচাঁয় বাচ্চারা হাউ মাউ করে কেঁদে উঠল। তখন পুরুষ শৃগালটটি স্ত্রীকে বলল,’তুমি মা হয়েও এত পাষান কেন। একটু বাদে তো ওরা বাঘের ক্যানাইন টিথের তীব্র খোঁচা খাবে, তার আগে তুমি ওদেরকে এ পিতৃপ্রদত্ত খোঁচা দেয়ার ব্যবস্থা করছ,এ নির্দয়তার কি কোন প্রয়োজন ছিল’। স্বামীকে ভ্যাজর ভ্যাজর করতে নিষেধ করে সে তাকে দ্বিতীয় নির্দেশনা দিল, ’আমাকে এখন তুমি জোরে প্রশ্ন করবে আমার সন্তানেরা কেন হাউমাউ করে কাঁদছে। প্রশ্নটি কিন্তু উচ্চ কন্ঠস্বরে করতে হবে যাতে আমাদের পর্যবেক্ষনরত বাঘটি তা শুনতে পায়’। স্বামী শৃগালটি তথাস্তু বলে স্ত্রীর কথামত উচ্চস্বরে স্ত্রীকে প্রশ্ন করল তাদের সন্তানরা কেন হাউমাউ করে কাঁদছে। উত্তরে স্ত্রী ততোধিক উচ্চস্বরে বলল, ‘ওরা বাঘের মাংস খেতে চাচ্ছে। বন্যার কারনে তো আমরা কিছুদিন বাঘ শিকার করতে যেতে পারিনি তাই লাঞ্চে বা ডিনারে ওরাও বাঘের মাংস খাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই একারনে ওরা এখন হাউমাউ করে কাঁদছে’। একথা অপেক্ষারত বাঘটির কর্নকূহরে প্রবেশ করা মাত্র সে প্রান বাঁচাতে ওখান থেকে দৌড়ে পালাতে লাগাল।
এদিকে বাঘকে এরকম ভীতিকর ভাবে ছুটতে দেখে ও জঙ্গলের একটি বৃক্ষের শাখায় বিচরনরত একটি শাখামৃগ বা বানর বলল, ’মামা তোমার কি হয়েছে, কোন সমস্যায় পড়েছ নাকি। আমার প্রতি তোমার আস্থা থাকলে তোমার প্রবলেম ব্যক্ত করতে পার। আমি যথাসাধ্য সমাধানের চেষ্টা করব’। বানরের ফিলানট্রফিক বা চ্যারিটিমুলক কথায় বাঘ খুশী হয়ে বলল, ’শোন ভাগ্নে, আর কতদিন বাঁচব বলতে পারব না, আমার রাজত্ব শেষ, এ জঙ্গলে এখন এমন একটি প্রানী এসেছে যার কিডসরা পর্যন্ত আমাদের মাংস দিয়ে নাস্তা করে’। বাঘের কথা শুনে বানর বলল, ’মামা তুমি হয়ত কোন ধোকায় পড়েছ। এমন কোন প্রানী আমি দেখি নাই যে তোমাদের বধ করে মাংস খেতে। তুমি আমাকে শুধু বলল কোনদিকটায় এ আজব প্রানীটি দেখেছ। আমি বার্ডস আই ভিউতে পর্যবেক্ষন করে খুব দ্র্রুত তোমাকে ব্রিফীং করব। তবে মামা আমার সিক্সথ সেন্স বলছে সম্ভবত তুমি কোন ধূর্ত শৃগালের চালাকীর কবলে পড়েছ’। বাঘ বানরকে জঙ্গলের জিপিএস ম্যাপ বুঝিয়ে দিল যেখানটায় সে এ প্রানীটিকে দেখেছে।
বানর তখন বাঘের আজ্ঞা পেয়ে কিছুক্ষনের মধ্যেই ওখানের একটা উঁচু বৃক্ষে পৌঁছে ভালভাবে লক্ষ্য করে দেখল তার ধারনাটাই ঠিক, চার সদস্যের একটি শিয়াল পরিবার বাঘের হাত থেকে মুক্তি পাবার আনন্দে বেশ খোশ-গল্পে মেতে আছে। দেরী না করে সে বাঘ মামার কাছে সে যা দেখেছে তা রিপোর্ট করল কিন্তু এত চেষ্টার পরও সে তার ভিতর যথেষ্ট প্রত্যয় উৎপন্ন করতে ব্যর্থ হল। বাঘটিকে সে আর কিছুতেই রাজী করাতে পারছিল না আবার ওদিকটায় যাবার ব্যাপারে। বানরটিও নাছোড়বান্দা। সেও তার বড় মামাকে দেখাবে যে ওটা শিয়াল, অন্য কোন প্রানী নহে।
অবশেষে বানরের ক্রমাগত অনুরোধে বাঘটি ওদিকে যেতে রাজী হল একটি শর্তে। শর্তটি হল বাঘ ও বানর উভয়ের গলা একটা লম্বা দড়ি দিয়ে সংযুক্ত থাকবে। বানর আগে থাকবে এবং পিছনে থাকবে বাঘ যাতে বিপদ হলে বানর প্রথমে সে প্রানীটির আক্রমনের শিকার হয় এবং এ অবসরে বাঘ পালিয়ে যেতে পারে। বানর বাঘের প্রস্তাব সাদরে মেনে নিল কারন সেতো শতভাগ নিশ্চিত ও প্রানীটি স্রেফ শিয়াল বৈ অন্য কিছু নহে। সে বাঘকে বলল, মামা, তুমি একটু অপেক্ষা কর, আমি বায়স ভাইর বাসা থেকে একটা দড়ি নিয়ে আসছি’। বাঘ বানরটিকে বলল, ‘বায়স ভাইটা আবার কে’। বানর বলল, ’মামা, শুদ্ধ বাংলায় কাককে বায়স বলে। বায়স ভাইরা এন্টিক কালেকশন করে। তাদের বাসায় আমি কত কিছু দেখি। পাটের দড়ি, তামার তার, পুরান ব্যাটারি, কাঁচের টুকরা, মোবাইলের খাপ, আরও কতকি’। বাঘ ধমক দিয়ে বলল, ‘ভাগ্নে এসব কথা বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি ওখান থেকে দড়িটা নিয়ে এসে কাজ শুরু করে দাও। ক্ষুধায় পেট ছটফট করছে। তুমি জাননা কবি সুকান্ত বলেছে ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়’।
বাঘের কথা শুনে বানরটটি বলল, ‘মামা তুমি সুকান্তের কবিতা এখানে বসে কোথায় শুনেছ’। বাঘটি বলল, ’আমি কি সবসময় এখানে থাকি। বছরে কয়েকবার কাজিনদের সাথে দেখা করতে সুন্দরবন যাই বিশেষ করে শীতকালে। তখন সেখানে অনেক ছাত্র-ছাত্রী লঞ্চে করে পিকনিক করতে আসে এবং লঞ্চের ছাদে বসে তারা কত গান, কবিতা, কৌতুক আনন্দভরে করতে থাকে। ওখান থেকেই আমার এসব শেখা’। বানর কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘তাহলে তুমি তোমার সামনের ভ্রমনে আমাকে সঙ্গী করবেতো, কত কিছুই না দেখতে পাব’। বাঘ বলল, ঠিক আছে সামনের ট্যুরে তোমাকে আমার সাথে নেব, অনেক মজা হবে তখন’। বানরের অপার আগ্রহ লক্ষ্য করে বাঘটি বলতে লাগল, ’একবার হয়েছে কি জান, এরকম একটি লঞ্চের ছাদে পিকনিক পার্টি চলাকালীন সময় পিছন দিকে হাঁটতে হাঁটতে সেল্ফি তোলার সময় ছাদ থেকে একজন ছাত্র পানিতে পড়ে যায়। বানর একথা শুনে বলল, ‘ওখানের পানিতেতো কুমীর আছে। তার পরিনতি কি ঘটল’। বাঘ বলল, ‘বিপদ ঘটতে পারত কিন্তু অন্য কারনে ঘটেনি। যদিও সে পুরো একটা কুমীর পরিবারের মাঝখানে পতিত হয় তবুও সে একেবারে অক্ষত অবস্থায় আবার লঞ্চে ফিরে আসে’। আশ্চর্য হয়ে বানর তখন বাঘকে বলল, ‘মামা, সেটা কিভাবে সম্ভব হল। কুমীরতো খুবই হিংস্র, তোমাদেরি জলজ ভার্সন’। বাঘ বলল, ‘তখন ও কুমীর পরিবারের বাবা কুমীরটি জুমে সারা বিশ্বের অন্যান্য জায়গার কুমীরদের সাথে ওয়েবিনারে ব্যস্ত ছিল, মা কুমীরটি নিমগ্ন ছিল স্টার জলসা দেখতে এবং তাদের বাচ্চা কুমীরগুলি পাবজি খেলছিল বিধায় কেউই খেয়াল করতে পারেনি ঝপ্ করে আকাশ থেকে এখানে কি পড়ল’। বাঘের একথা শুনে বানর বলল, তুমি তখন কি করেছ, মানুষওতো তোমারও আহার’। বাঘ শান্ত কন্ঠে বলল, ’আমিও তখন ফেসবুকে চিলির এক বাঘিনী বান্ধবীর সাথে মেসেঞ্জারে চ্যাটিং করছিলাম। হঠাৎ করে সে চিলি থেকে বাংলাদেশে চলে এসে আমাকে সারপ্রাইজ দিতে পারে। এ রকম ঘটলে তুমি কিন্তু ইউটিউবের জন্য তখন স্মার্ট ফোন থেকে একটা ভিডিও তৈরীর ব্যবস্থা করে রেখ।‘
বাঘ ও বানরের এহেন কথোপকথন শেষে বানর কাকের বাসা থেকে একটা দড়ি এনে নিজের ও বাঘের গলায় বেধে শিয়াল পরিবারটি যেদিকে অবস্থান করছে সেদিকে রওহনা হল। বানর সামনে সামনে হাঁটছে আর পিছনে পিছনে তাকে অনুসরন করে হাঁটছে বাঘ। এবার বাঘ ও বানরকে একসাথে আসতে দেখে পুরুষ শৃগালটি বলল, ‘গিন্নী, এবার আর বাঘকে ধোকা দেয়া যাবে না, সাথে তার বিজ্ঞ অ্যাডভাইজার বানর মহাশয় রয়েছে। মৃত্যুর পরোয়ানা আমাদের দিকে ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছে’। শিয়ালের গিগ্নী স্বামীকে ধমক দিয়ে বলল, ’মহাজনদের কথা কি তুমি ভুলে গিয়েছ। বিপদে মাথা কুল রাখবে’। স্বামী শিয়ালটি স্ত্রীকে বলল, ‘তুমি যা বলেছ এটা সবি সত্যি তবে অচিন তুরুদনা’। স্ত্রী বলল, ‘তোমার কথার প্রথম অংশ বুঝলেও দ্বিতীয় অংশ আমার মাথায় ঢুকেনি, অচিন তুরুদনা কি’। স্বামী শিয়ালটি বলল, ‘এটা একটা রাশান শব্দ যার মানে হল খুবই কঠিন’। স্বামীর কথা শেষ না হতেই স্ত্রী আবার আগের মত স্বামীকে তার নখ দিয়ে বাচ্চাদের খোঁচা দিতে বলল। খোঁচা দেয়া মাত্রই শৃগাল শাবকরা ব্যথা পেয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। স্বামী আগের মত জিজ্ঞেস করল তাঁর বাচ্চারা কাঁদছে কেন। স্ত্রী বলল ওরা বাঘের মাংস খেতে পাচ্ছে না বিধায় কাঁদছে। এবার আর বাঘ একথা শুনে ভয় পেল না কারন বানরতো তার সামনে রয়েছে এবং এরা দুজনে একটু একটু করে শিয়াল পরিবারটির দিকে এগিয়ে চলল।
এদিকে বানরের স্ত্রী স্বামীকে ফিসফিসিয়ে বলল, তুমি আমাকে প্রশ্ন কর বাঘ আমরা কোথায় পাব’। স্ত্রীর কথা মত শিয়ালটি তখন তাকে জিজ্ঞেস করল, ’বাঘ আমরা কোথায় পাব’। স্ত্রী তখন উত্তর দিল, ‘কেন, বানরকে তো অনেক আগেই পাঠিয়েছি এ বনে কোন বাঘ থাকলে তাকে ধরে আনতে। ঐ দেখছ ন্ বানরতো ঠিকই একটি বাঘ ধরে আমাদের কাছে নিয়ে আসছে’। এ কথা বাঘ শোনা মাত্র দিল প্রচণ্ড দৌড়। ধাবনরত বাঘের গলার দড়িতে বেধে থাকা বানরটির গাছে গাছে ধাক্কা খেতে খেতে তখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। দড়িটা গাছে জড়িয়ে ছিড়ে গিয়েছিল বিধায় সে কোনমতে প্রানে বেঁচে যায়। তবে এ ঘটনার পর বানরটির ভিতর এক দিব্যজ্ঞানের উদয় হয়, ’অযাচিত ভাবে কারো উপকার করতে গেলে সমূহ বিপদের সম্ভাবনা প্রবল এমনকি প্রানও চলে যেতে পারে’।
চিরঞ্জীব সরকার। মুম্বাই
-
গল্প//উপন্যাস
-
29-04-2022
-
-