অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
তর্কে বিতর্কে ছফা কোন জাতের -মানিক বৈরাগী

     মহাত্মা আহমদ ছফা'র মৃত্যু জন্ম বার্ষিকী এলেই সারা দেশে সাহিত্য দর্শন চর্চাকারীদের তোড়জোড় চলে।চলে আলোচনা সমালোচনা। অনুষ্ঠান বন্দনা ও সাগরেদদের মধ্যে উপ সাগরেদরা পক্ষ বিপক্ষে একে অপর কে  ঘায়েল করার প্রচেষ্টা চালায়।
     ছফা কে নিয়ে টানাটানি হেছড়া হেছড়ি। প্রত্যক্ষ সাগরেদদের রাজনৈতিক দার্শনিক বিভক্তি এসবের অন্যতম কারণ।
     তো এসব সাগরেদের উপসাগরেদ গণেরা আবার বিভিন্ন সময়ে ছফা'র  উদৃতি বিবৃতিকে পুজি করে গোষ্ঠী স্বার্থে সিদ্ধি হাসিলের ফন্দি ফিকির খুব দেখছি ইদানীং। এসব বিরক্তিকর অবস্থা থেকে নিজের আত্মোপলব্ধি টুকু লিখে ছফা স্যারের প্রতি সম্মান টুকু জানাতে চাই।
     রণেশ দাশ গুপ্তের সাথে আহমদ ছফা'র কবিতার সম্পর্ক
     সংবাদে প্রকাশিত কবিতার সম্মানি
     ছফা'র কবিতার পশ্রয় আশ্রয়
     কবিতার সম্মানি টা যে রণেশ দাশ গুপ্ত তাঁর বেতনের টাকা থেকে দিতেন ছফা'র চাইতে ছফা'র কবিতা কে ভালোবেসে।
     উপনিবেশিক বুদ্ধিজীবী গণ ছফা'র নাম পরিবর্তন করে সাফা করেছিলেন, নাম পরিবর্তনে ছফা'র  প্রতিবাদ কে যে সমর্থন করেছিলেন কিন্তু রণেশ দাশ গুপ্ত।
     কথিত ছফা চর্চা কারিগণ তা কি ভুলে গেছেন? না-কি  আবুল হাসানের কবিতার মতো তাও রাজনীতি? ছফা আমৃত্যু রাজনীতিরই শিকার।
     ছফা চর্চার সাথে কতো অখাদ্য কুখ্যাদ্যের বন্দনা শুনা যায়। কিন্তু  রণেশ দাশ গুপ্তের নাম নিলে কি কারো কারো ইমান নিয়ে টানাটানি হয় ভাব।
     আজকাল অনেকেই দেখি ছফা বন্দনা করে ছফা সামগ্রিক ভাবে না মেনে না জেনে। দুর্ভাগা বাঙ্গাল কিন্তু নজরুল কেও ভাগ করে।
     রবীন্দ্র সঙ্গীত বিরোধী রবীন্দ্রনাথ ঠেকাও আন্দোলনের নেতার সন্তানও আজকাল  রবীন্দ্র ভক্তিতে গদগদ। ছফা এসব ভণ্ডামি ধরিয়ে দিয়েছিলেন বলে রবীন্দ্রজীবিদের  প্রতি হিংসার শিকার হতে হয়েছিলো।
     আজকাল কাউকে কাউকে দেখা যায় ছফা নাম কীর্তনে জাতে উঠতে চান।
     প্রশ্ন হচ্ছে ছফা কোন জাতের, তাঁর জাতের স্বরুপ কি? উত্তর নাই নাই।
     তিনি তো বাল্যকালেই মসজিদে তাঁর বাপের পশ্রয়ে রামের ভক্তি পদ্য পড়ে শুনান মসজিদে।
     তিনি তো নব্বইয়ের ঘূর্ণিঝড়ের পর নিজ গ্রামেই ঝড়ে ভেঙে পড়া হিন্দুদের মন্দির নির্মাণ করে দিয়েছিলেন।
     তাহলে তিনি কি রণেশ দাশ গুপ্তের প্রভাবে করেছিলেন? অথচ রণেশ দাশ গুপ্ত তখন বাংলাদেশ বিহিন। ছফা মানব জাতের একজন খাটি বাঙ্গাল বললে সমস্যা কোথায়? 
     কবি ফররুখ আহমদ কে নিয়ে জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, শামসুর রাহমান ও লিখেছেন, শুধু ছফা না। কথিত বাম চোখে তা কিন্তু পড়েনা।
     অথচ সরকারি প্রতিষ্ঠান ইসলামি ফাউন্ডেশনে ছফা বক্তব্য রাখায় তাকে যারা মুজাহিদ মনে করেন তারা ভুলে যান ইসলামি ফাউন্ডেশন কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হাতে পুণর্জন্ম লাভ করা প্রতিষ্ঠান।
     ছফা তো জার্মান কবি গ্যাটে অনুবাদ করেছেন, তাহলে তিনি কি হিটলারের জার্মানি হয়ে গেলো। বার্টেন্ড রাসেল সহ আরো অনেক ইহুদি নাসারা লেখকের লেখা অনুবাদ করেছেন তাহলে তিনি কি ইহুদি নাসারা হয়ে গেছেন?
     শল্যবিদেরা যেমন মানুষের কৃমি ঘাটেন তেমনি নজরুল, ছফা'র জাত পাত ধর্ম কুষ্টি না ঘেটে তাঁর সৃষ্টি গুলো নিয়ে হুলুস্থুল টানাটানি করি।
     বুঝতে চেষ্টা করি ছফা কোন বিবৃতি কোন প্রেক্ষাপটে দিয়েছিলেন। বুঝতে চেষ্টা করি কোন প্রবন্ধ কোন প্রেক্ষাপটে লিখেছেন।
     বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির কঠোর সমালোচক আহমদ ছফা কিন্তু আমৃত্যু বঙ্গবন্ধুর উপহার কম্বল পরম শ্রদ্ধায় মমতায় আগলে রেখেছেন। এমন প্রেম  কঠিন আওয়ামীদের কাছেও পাওয়া যাবেনা। তাহলে তিনি কি আওয়ামীলীগ হয়ে গেলেন?
     আহমদ ছফা আওয়ামীলীগ নেতাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে যেমন কঠোর সমালোচনা করেছেন তেমনি তিনি বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে এক দুই প্যারার মধ্যে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যা লিখেছেন তাও স্থাবকদের কয়েক টি এক জায়গায় এনে তুল্যমূল্য ও চলেনা।যেমন রসমলাই, সন্দেস দেখতে যেমন আকারে ছোট, ঠিক একি ভাবে বাজারে মেলায় পথের ধারে গামলা ভর্তি রসগোল্লা আকারে অনেক বড় দামও কম। কিন্তু স্বাদ বলা মুশকিল।
     তিনি তো তার বইতে জিয়ার ক্ষমতা দখল কে ডাকাত সর্দারের সাথে তুলনা করেছেন।
     বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ছফা কে নিজ হাতে রান্না করে খাইয়েছেন তাই বলে ছফা কি আওয়ামী বুদ্ধিজীবী?
     অথচ ছফাই শান্তি চুক্তির গলদ গুলো ধরিয়ে দিলেন। চুক্তির গলদ না সরানো বা শোধনের ব্যবস্থা না করার কুফল ভোগ করছে রাষ্ট্র ও পাহাড়ি জনজাতি গোষ্ঠী।
     ছফা জাসদ রাজনৈতিক দলের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন, তাদের পত্রিকায় লিখতেন, কিন্তু সেই জাসদ নিয়েও তার উপলব্ধির লেখা গুলো পড়েন,পড়ে বা না পড়েই তাঁকে জাসদ ট্যাগ লাগিয়ে দেন, অথচ সেই জাসদ এর একটি সক্রিয় অংশ কিন্তু বর্তমান সরকারের অংশিদার।
     শুধু  ফরহাদ মজহার সলিমুল্লাহ খান কেন উদাহরণ করেন, হুমায়ুন আহমদ, জাফর ইকবাল অসিম সাহা রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ নরুল হুদাদের কেন নিরাপদ রাখেন? আহমদ ছফা কিন্তু কবির চৌধুরীকে নিয়ে বিজিএস নামে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তখন কিন্তু ছফা এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীদের কাছে খুব আদরনীয় ছিলেন বটে।
     ৬০-৭০-৮০র বিশাল একটি তরুণ গুষ্টি শিক্ষক হতে পারেন তাহলে তার ক্লাসে বহু শ্রেণী গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা ভিড় করবেই। সেই শিক্ষার্থীরা যে যার শ্রেণী চরিত্র অনুযায়ী তার স্বরূপ প্রকাশ করলে তাতে  ছফা'র কি দায়।
     বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগ এ যেমন খন্দকার মুশতাক ছিলো ছফা'র ক্লাসে ও ফরহাদ মজহার ছিলো। তবে ফরহাদ মজহার এর যে মৌলিক সৃষ্টি নাই তা অস্বীকার করবেন কি করে। চানাচুর ছাড়া হুমায়ুন আহমদ এর আর কি আছে বলেন।
     আমরা যারা ছফা'র ক্রান্তিলগ্নে নবীন সাহিত্য সংস্কৃতি রাজনীতির নবীন কর্মী সলিমুল্লাহ খানের কারনে ছফা'র সাম্রাজ্যে প্রবেশাধিকার পেতে সহায়ক তা নয়কি?
     আসুন তর্কাতর্কি ভেতর দিয়ে মানুষ ছফা কে দেখি। জাত পাত দেখে নিজের ঠিকুজী যেনো না হারাই।

মানিক বৈরাগী
১৩শ্রাবণ ১৪২৬
২৮জুলাই ২০১৯
কক্সবাজার, বাংলাদেশ।