নিতাই মৃধা’র কিছু কবিতা
ও চাঁদ! তাকাও নিজের দিকে
ও চাঁদ! তাকাও একবার নিজের দিকে,
নিজের দিকে কখনো তোলনা আঙুল,
আঙুল তোল অন্যের দিকে।
চালুনি হয়ে সুঁচের ছিদ্র খোঁজা!
আমি ধোয়া তুলসী পাতা, বাকিরা অসৎ!
কখনো ভাবিনে নিজের কথা,
কখনো দেখিনে নিজের চেহারা!
অন্যের দিকে আঙুল তোলার আগে
তাকাও একবার নিজের দিকে!
আয়নায় দেখো মুখ,
নিজের মুখটা একটু
দেখলে স্পষ্ট হয়ে যাবে,
কলঙ্ক রেখায় ভরা সে চাঁদ মুখ!
রোবট জীবন
রোবট জীবন এখন
ভুলে গেছি আত্মীয়-স্বজন,
ভুলে গেছি লোক- লৌকিকতা,
ভুলে গেছি সামাজিক বন্ধন।
দূরে দূরে দূরত্ব বজায় রেখে
চলতে চলতে মনের অজান্তে কখন,
একে অন্যের থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে ফেলেছি।
গৃহবন্দী থেকে গুটি গুটি চলাফেরা,
শামুকের খোলের মধ্যে দেহটা পুরে
অতি সন্তর্পনে ধীরে পা রাখা, বিপদ বুঝলে
আবার নিজেকে গুটিয়ে শামুকের
খোলের মধ্যে পুরে ফেলা,
এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি, করোনা-জীবনে।
শ'য়ে-শ’য়ে মানুষের মৃত্যুর খবর পেয়ে
বেশ নির্বিকার চিত্তে ঘুমিয়ে আছি,
মৃত মানুষের জন্য জাগে না যে হাহাকার!
যে মরছে মরুক, শুধু নিজেকে
বাঁচানোর তাগিদে,অতি সন্তর্পনে পা ফেলে টিঁকিয়ে রেখেছি এ জীবন।
একটি_কথা
`একটি কথা দেখায় যে পথ, বাঁচার নতুন মন্ত্র
একটি কথা ভোলায় ব্যথা মিথ্যে মন্ত্র তন্ত্র।
একটি কথা ওষুধ যেন, জুড়িয়ে দেয় ক্ষত,
একটি কথা বিদ্ধ করে তীরের ফলার মত।
একটি কথা মনের মধ্যে তুলে শতক ঢেউ,
একটিকথায় উথালপাথাল জানে না তো কেউ।
একটি কথায় জ্বলে আগুন মাথায় চড়ে খুন,
একটি কথায় মজায় এমন পানের সঙ্গে চুন।
একটি কথা বারুদ হয়ে বিপ্লবীদের বুকে,
একটি কথা শান্তি আনে অশান্তি যায় চুকে।
একটি কথায় ছেলে-বুড়ো পাল্লা দিয়ে হাসে,
একটি কথা মধুর বচন সবাই ভালোবাসে।
একটি কথায় দুঃখ জাগে মায়ের চোখে জল,
একটি কথায় ছুটে চলে দামাল ছেলের দল।
একটি কথা নাড়িয়ে দেয় রাজার সিংহাসন
একটি কথার জাদু এমন ভুলিয়ে দেয় মন।
একটি কথা হাজার কথার সমান, যদি তার-
অর্থ থাকে, হয় দামি সে, থাকে কথার ভার।
একটি কথার গুণ অপগুণ সবাই ভেবে দেখো
কথায় কথায় বাড়ে কথা, বলতে কথা শেখো
নিতাই মৃধা। কলকাতা
-
ছড়া ও কবিতা
-
14-12-2020
-
-