ভিন্ন জীবন -সুফিয়া ফারজানা
পর্ব পাঁচ পড়তে ক্লিক করুন
পর্ব -ছয়
সেলিম চলে গেছে শ্রাবণ মাসে। আর শীতের শেষে বসন্ত আসার সাথে সাথেই, ফাল্গুনের শুরুতেই লিলির কোল জুড়ে আসে একটি ফুটফুটে পুত্রসন্তান।। যদিও তার আগমনে তার মা ছাড়া আর কেউই খুশি হয় না তেমন। পৃথিবীতে আসার আগেই যে সন্তান পিতৃহারা হয়, আর আগমন তেমন কোন খুশির বারতা বয়ে আনে না, আনতে পারে না হয়ত।।
ছেলের দরিদ্র নানা আকিকা করে তার নাম রাখলেন আলিফ আব্দুল্লাহ্। আলিফের দাদা-দাদী আর বড় চাচা একই গ্রামের অধিবাসী হলেও তারা সম্পূর্ণ উদাসীন ছিল তাদের এই বংশধরের অস্তিত্বের প্রতি। এই ছেলে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে তাদের সম্পত্তিতে ভাগ বসাতে আসবে কি না, এই ছিল তাদের একমাত্র দুশ্চিন্তা। তবে পিতার বর্তমানে ছেলের মৃত্যু, মৃত ছেলের বংশধর সম্পত্তি আদৌ পাবে কি না, সেটাও অনিশ্চিত।
লিলির প্রভাবশালী শ্বশুর খুব চেষ্টায় ছিলেন সন্তানসহ লিলিকে গ্রাম ছাড়া করতে। আর লিলির বাবা চাইলেন, তার এই অসহায়, দুর্ভাগা কন্যাটিকে পুনরায় পাত্রস্হ করতে। কিন্তু দ্বিতীয় বিয়েতে স্পষ্ট অস্বীকৃতি জানায় লিলি। সেলিমের স্হান এ জীবনে আর কাউকে দিতে পারবে না সে। সেলিমের সন্তান আর তার স্মৃতি বুকে নিয়েই তার এক জীবন সে কাটিয়ে দিতে পারবে। তার মতামত সে জানিয়ে দেয় তার বাবা মা কে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত গ্রামে টিকতে পারে না লিলি। তার বয়স, তার যৌবন আর শ্বশুর বাড়ির ষড়যন্ত্র তাকে টিকতে দেয় না গ্রামে। লিলির বাবার আকস্মিক মৃত্যুর পর তিন বছরের শিশু সন্তান সহ তার ঠাঁই হয় রাজধানী ঢাকার এক বস্তিতে। প্রতিবেশী এক বোনের সহায়তায় চাকরিও পায় একটি পোশাক কারখানায়। জীবন যুদ্ধে ঢাল তলোয়ার ছাড়াই অবতীর্ণ হয় অসহায় মেয়েটি।।
গার্মেন্টসের চাকুরিতে বেশ ভালো করে লিলি। চটপটে, সপ্রতিভ এবং অসম্ভব ভদ্র মেয়েটি খুব সহজেই সুনজরে আসে সবার। কারখানার সুপারভাইজার মতির চোখে পরে লিলি একদম প্রথম দিনই। অতিরিক্ত অনেক সুবিধাও দেয় মতিন লিলিকে। তারপর একদিন সে চলে আসে লিলির বস্তির বাসায়। তখন মায়ের দায়িত্বে আলিফকে রেখে নিশ্চিন্তে চাকরি করতো লিলি। বাবার মৃত্যুর পর অভাব অনটনে মাও টিকতে পারেননি গ্রামে খুব বেশি দিন। মাকে তাই লিলি নিয়ে এসেছিল নিজের কাছে। আর ছোট বোন মলির দায়িত্ব নিয়েছিল তার ছোট চাচা আমির শেখ।।
লিলি চমৎকার মেয়ে, চটপটে, ভদ্র, হাসিখুশি, কর্মঠ, স্বাস্থ্যবতী, দেখতে শুনতেও ভালো। শুধু গায়ের রংটাই একটু ময়লা। গ্রামে মতির বউ আছে, একটা মেয়েও হয়েছে, তাতে কি? শহরে তো সে একা। শহরে লিলি থাকুক। গ্রামে তার বউয়ের জায়গাটা তো সে লিলিকে দিচ্ছে না। লিলি হবে শহরের বউ। লিলি বিধবা, তাই তাকে বিয়ে করতে ধর্মেও কোন বাধা নেই। তাছাড়া লিলির নিজের ইনকাম আছে। তাকে সংসার খরচও দিতে হবে না।
সরাসরি লিলির মায়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে সুপারভাইজার মতি, 'খালাম্মা, আমি লিলিকে বিবাহ করতে চাই। আপনি মত দিলে আগামী শুক্রবারেই কাজী নিয়ে আসবো। আমার কোন দাবি-দাওয়া নাই। আমি লিলিকেই চাই শুধু। লিলির ছেলের দায়িত্ব আজ থেকে আমি নিলাম। আপনি মত দেন দয়া করে।' (চলবে)
সুফিয়া ফারজানা
ঢাকা, বাংলাদেশ
-
গল্প//উপন্যাস
-
05-09-2023
-
-