অটোয়া, বুধবার ১২ মার্চ, ২০২৫
আজি শুভ্র বসন্ত জাগ্রত দ্বারে - হারুন রশীদ বাঙলাবাজ

দুদিন আগে প্রচন্ড বরফ পড়েছিল। রাতেই দেখি সামনের আঙ্গিনা হাটু অবধি বরফে ঢাকা। গায়ে জ্বর এসে গেল এ দেখে। সকাল হলেই বরফ পরিষ্কার করতে হবে। আমার বরফ সরানোর যন্ত্রটা অকেজো হয়ে পড়েছে। তাই বেলচা দিয়ে বরফ সরাতে হবে ভেবে রাতে একরকম ঘুমই হলো না। সকালে ঘুম থেকে উঠলাম। বৌ নাস্তা বানাতে নীচে গেল। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ ও দৌড়ে এসে বলতে লাগল "জান জান, আমাদের সামনের আঙগিনায় কোন বরফ নেই। মনে হয় কে যেন এসে বরফগুলো পরিষ্কার করে দিয়ে গিয়েছে।" আমিও দৌড়ে গেলাম নীচে। দেখলাম, হে তাইতো! কিন্ত বুঝতে পারলাম না কে করেছে। মেয়েদেরকে জিজ্ঞেস করলাম। কিন্ত কেউ বলতে পারল না। আমার পাশের প্রতিবেশী দুজনের বরফ সরানোর যন্ত্র নেই। তাই ওদের করা সম্ভব নয়। তা হলে কি রাস্তার ওপারের বাড়ীগুলোর কেউ করে দিয়ে গিয়েছে? কাকে জিজ্ঞেস করব? বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞেস করাটা সম্ভব নয়। এই কঠিন শীতের মাঝে কেও দরজা খুলে খুশী মনে কাউকে অভ্যর্থনা জানাতে তৈরী নয়। নগর কর্তৃপক্ষ এভাবে হুট করে এসে বরফ বিনা পয়সায় পরিষ্কার করে দিয়ে যাবে না যতদূর জানি। ভাবলাম যে করে দিয়েছে তাকে তো অন্তত: একটা ধন্যবাদ দেওয়া দরকার। কিন্ত উপায় খোজে পেলাম না। তাই মনে মনে দূর থেকে বললাম "হে হৃদয়বান, তুমি যেই হও তোমাকে আমার হাজারো প্রণাম। আহা! পৃথিবীটা যদি এই শুভ্র নরম বরফগুলোর মত নরম হৃদয়ের পরশে ভরে থাকতো সদা। কি সুন্দরইনা হতো আমাদের এই সুন্দর ধরা!"

আজ শনিবার। ছুটির দিন। সকালে বসেছিলাম জানালার পাশে। আর তাকিয়ে ছিলাম দুদিন আগের পরিষ্কার করা বরফহীন আঙ্গিনাটির দিকে। সবার বাড়ির ঐ বাইরের আঙ্গিনাটুকু ছাড়া চারিদিক শুভ্র বরফে ঢাকা। তা দেখে মনে সাধ হলো একটু লিখার। সবার সাথে তা ভাগাভাগি করলাম। 

আজি শুভ্র বসন্ত জাগ্রত দ্বারে 

আহা! 
কি শ্বেত শুভ্র তুষার আবৃত ধরনীর ধরাতল
ধ্যান নিমগ্ন স্তব্ধ গগন নাহি বহে পরিমল।
নাহি কোলাহল শান্ত ভূতল শান্তির পরশ বহমান
বৃক্ষ রাজি নাহিক সাজি নাহি কোথা কলতান।
এমনি শান্ত এই শুভ্র বসন্ত করিয়া প্রশান্ত মোর অশান্ত ধরাতল
আহা! আনিত যদি মমতা ঢালি চারিদিক উপারি আনন্দ বন্যা জল!
আহা! 
যদি আনিত!
কত না সুখে পরাণে মোর আনন্দ ধারা বহিত।

হারুন রশীদ বাঙলাবাজ
ফাল্গুন ২, ১৪৩১
অটোয়া